শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অবশেষে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা হলো বোনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জীবিত ও সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে ডন নিউজ। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর বোন ড. উজমা খানমের সঙ্গে আদিয়ালা জেলেই তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে না দেওয়ায় এবং স্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকার কোনো স্পষ্ট তথ্য না দেওয়ায় দেশজুড়ে গুঞ্জন ও উদ্বেগ বাড়ছিল।

আজ কারাগারে ইমরানের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেন উজমা। পরে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইমরান খানের স্বাস্থ্য পুরোপুরি ভালো আছে। তবে তিনি খুবই রেগে আছেন। ইমরান বলেছেন, তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁকে সারা দিন কারাকক্ষে আটকে রাখা হয়। অল্প সময়ের জন্য বাইরে যেতে দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।

উজমাসহ ইমরানের অন্য দুই বোন আলিমা খান ও নোরিন নিয়াজি আজ আগে থেকেই রাওয়ালপিন্ডির ফ্যাক্টরি নাকা এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে কারাগারের দিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। কিছু দূর পরপর বসানো হয়েছিল তল্লাশিচৌকি। এত বাধার পরও কারাগারের দিকে হেঁটে এগিয়ে যান তিন বোন। এ সময় তাঁদের একটি তল্লাশিচৌকিতে আটকে দেওয়া হয়।

পরে শুধু উজমাকে কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এই কারাগারে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বন্দী রয়েছেন ইমরান। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগেও মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলার রায়ও দিয়েছেন আদালত। তবে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন ইমরান।

গত মাসে ইমরান খানের তিন বোন—নুরিন নিয়াজি, আলীমা খান এবং উজমা খান অভিযোগ করেন, ভাইয়ের খোঁজ নিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকেই ইমরান খানের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র হয়।

এদিকে ইমরানের দুই ছেলেও মন্তব্য করেন, কারাগার কর্তৃপক্ষ ‘অপরিবর্তনীয় কিছু’ গোপন করার চেষ্টা করছে। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ছেলে কাসিম খান জানান, আদালত থেকে কারাবন্দী ইমরান খানের সঙ্গে সাপ্তাহিক সাক্ষাতের নির্দেশ থাকার পরও কাউকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না। এমনকি ইমরান খানের ব্যক্তিগত চিকিৎসককেও জেলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

জানা যায়, পরিবার বা নিজের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতাদের সঙ্গে প্রায় টানা ২৫ দিন ধরে কোনো সাক্ষাৎ হয়নি ইমরান খানের। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ায়। ধারণা করা হচ্ছিল—মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হতে পারে, এমন ভয়েই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করে যাচ্ছে।

ইমরান খানের সমর্থকদের আন্দোলন ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডিতে জোরালো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই শহরের প্রশাসন গণজমায়েত নিষিদ্ধের আদেশ জারি করেছে। তারপরও মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাই কোর্টের সামনে ইমরান খানের সমর্থকেরা বিক্ষোভে নামে।

গত রোববার (৩০ নভেম্বর) পিটিআই–এর সিনেটর খুররম জিশান অভিযোগ করেন, ইমরান খানকে দেশ ছাড়ার চাপ দিতে জেলেই তাঁকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাঁর দাবি, ইমরানের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে সরকার তাঁর কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করছে না।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন। তাঁর মৃত্যুর গুজব প্রথম ছড়াতে শুরু করে আফগানিস্তানের কিছু সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে। পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক সম্প্রতি সীমান্ত বিরোধ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।