আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলায় প্রায় ১০০টিরও বেশি বিমান ব্যবহার করেছে। এই বিমানগুলো ইসরায়েল থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ইরানে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি জেটগুলো জর্ডানের আর ইরাকের আকাশপথ অতিক্রম করে ইরানে হামলা চালিয়েছে।
ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (IRNA) এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন যেসব নিহতের নাম নিশ্চিত করেছে তারা হলেন:
আইআরজিসি’র কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি। তেহরানের পিরোজি স্ট্রিটে IRGC-এর সদর দপ্তরে হামলার সময় তিনি নিহত হন। নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট ফেরেদুন আব্বাসী নিহত হয়েছেন। তিনি নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সময় নিহত হন। নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচিও নিহত হয়েছেন। নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের সময় তিনি নিহত হন।
হামলায় অত্যাধুনিক এফ-৩৫ লাইটনিং -২ , এফ-১৫সি/ডি ঈগল বাজ, এবং এফ-১৬১ সুফা জেট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া রিফুয়েলিং বিমান এবং গোয়েন্দা বিমানও মিশনে সহায়তা করেছে। এই বিমানগুলো ভারী মিউনিশন বহন করতে সক্ষম এবং সিরিয়ার রাডার সিস্টেমে প্রাথমিক হামলা চালিয়ে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।
সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। ফলে, ইসরায়েল জেটগুলো আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের ওপর দিয়ে ঘুরে ইরাকের আকাশে প্রবেশ করেছে। এই দীর্ঘ পথের কারণে মাঝ আকাশে রিফুয়েলিংয়ের প্রয়োজন পড়েছিলো।
ইসরায়েলি হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং দূরপাল্লার মিসাইল সক্ষমতা। তেহরান, খুজেস্তান, এবং ইলাম প্রদেশের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া মিসাইল উৎপাদন কেন্দ্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (S-300 সিস্টেম সহ), ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর ঘাঁটি তে আক্রমণ চালিয়েছে।
তেহরানের পূর্বে একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘাঁটি এবং দক্ষিণে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে ক্ষতি হয়েছে।
এখনও নিহতদের সঠিক তালিকা নিশ্চিত হয়নি। তবে, রিউমার ইজ ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ, মোহাম্মদ বাকেরি, এবং IRGC- এর কমান্ডার হোসেইন সালামী এই হামলায় নিহত হয়েছে, কিছু ইরানি চ্যানেলও এই দাবি করেছে।
তবে এখন পর্যন্ত ইরানের সরকারি সূত্রে জানা গেছে, হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক এবং চারজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, তবে ইরানের সুপ্রিম লিডার আলি খামেনি বলেছেন, হামলাকে “অতিরঞ্জিত বা অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।” তিনি ইরানের জনগণের শক্তি ও ইচ্ছা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। একটা আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া ইরান দেখাবে তা মোটামুটি নিশ্চিত।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ইতিমধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে। তেলের দাম অলরেডি ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলারে পৌঁছেছে। ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে তেল সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকলেও সরাসরি সামরিক সহায়তা দেয়নি।
ইসরায়েল এই হামলায় এফ-৩৫ লাইটনিং -২ স্টেলথ ফাইটার জেট ব্যবহার করেছে, যা রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। এফ-৩৫-এর স্টেলথ ক্ষমতা ইরানের এস-৪০০ এবং এস-৩০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সনাক্তকরণ এড়াতে পারে। যদি কোনও রকমে এস-৪০০ বা এস-৩০০ স্টেলথ জেট সনাক্ত করে তবে তা এত স্লো যে রিয়েকশন এট্যাক করার আগেই এফ-৩৫ তার হামলা শেষ করে ফেলে।
এছড়া ইসরায়েলি জেটগুলো ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ না করে ইরাকের শুমারা এলাকা থেকে লং-রেইঞ্জ মিসাইল নিক্ষেপ করেছে, যা ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ার সময় কমিয়ে দিয়েছে।