বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১১ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ইসরায়েল ধ্বংসে খোমেনির বদদোয়াই কি যথেষ্ট নয়!

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : কারা জানি বেশি বলতো, “দুনিয়ার মানচিত্র থেকে ইসরারেলের নাম-নিশানা মুছে ফেলব। ইসরায়েল নামের কোনো অস্তিত্ব বিশ্বে থাকবে না।” হ্যাঁ, মনে পড়েছে, অগ্নিউপাসকদের অধস্তন বংশধর আলখেল্লায় আবৃত কলিযুগের অঘোষিত আর্যমেহের খোমেনি ও খামেনিরা। শিয়া হোক, সুন্নি হোক মুসলমানরা মুসলমানদের পশ্চাৎদেশে বংশদণ্ড প্রবিষ্ট করাতে যতটা পারঙ্গম, শক্তিশালী দুশমনের উৎক্ষিপ্ত ধ্বজার সামনে পশ্চাৎদেশের বস্ত্র উন্মোচন করে দিতেও ততটাই আগ্রহী।

১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর থেকে কোম নগরী থেকে খোমেনি ও খামেনিদের হুঙ্কার শুনে আসছি, ইসরায়েলকে টিকতে দেবে না ইরান। হম্বিতম্বির কোনো শেষ ছিল না। কথায় বলে “খালি কলসি বাজে বেশি।” ইসরায়েলকে টিকতে না দেওয়া দূরের কথা, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ, সুলতান-আমিরদের পুতুল নাচের রাজা-বাদশা বা বানরের মতো নাচাচ্ছে ইসরায়েল। “যেমনি নাচাও তেমনি নাচে পুতুলের কি দোষ?” ইরান যে ইসরায়েলের কাছে নস্যি, তা এর আগেও ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তা প্রমাণ করেছে।

তবে স্বীকার করতেই হবে, ইরানি ভাইয়েরা তাদের শৌর্য প্রদর্শন এবং আর্যজাতির “বীর্যের” প্রবাহ ঘটিয়েছিল ইরাকের বিরুদ্ধে। নয়টি বছর যুদ্ধ করেছে তারা। ভালোই হয়েছে। বিধর্মী কাফেরদের হাতে কুত্তার মতো মরার চেয়ে, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের হাতে মরেছে। লড়তে হলেও মুসলামানের বিরুদ্ধে ও মরতে হলেও মুসলমানের হাতে। ভাইয়ে ভাইয়ে লড়ে মরার মধ্যে মজাই আলাদা। এমন মরণেও অহঙ্কার আছে। “শহীদি দরজা তো ইরাকি-ইরানি উভয়ের জন্যই খোলা। উভয়েই শান্তির ধর্ম ইসলামের ধারক বাহক। উম্মতে মুহাম্মদী। মিল্লাতে ইব্রাহিমী! আল্লাহর পিয়ারা বান্দা। সুবহানআল্লাহ!

ইসরায়েল কোনো শত্রুদেশ হলো! চুল থেকে ধরে টিপে মেরে ফেলার উঁকুনতূল্য। বনি ইসরায়েলিরা মুসা নবীর কথা বার বার অগ্রাহ্য করে অভিশপ্ত হয়েছে, ইসরায়েল তো সেই অভিশপ্ত ইহুদিদের দেশ। ওটাকে নির্মূল করতে মিসাইল লাগবে কেন? খোমেনি – খামেনিদের দোয়ার বরকত ও শক্তি আছে না! দোয়া পড়ে ইসরায়েলমুখী হয়ে ফু দিলেই তো সেগুলো মিসাইলের মতো শা শা উড়ে ইসরায়েলকে তাবা তাবা করে দেবে এবং ইসরায়েল ফতেহ হয়ে যাবে। আলহামদুলিল্লাহ।

ইতিহাস পাঠ করুন। শত্রু ইসরায়েল নয়। মুসলমানই মুসলমানের শত্রু। এই শত্রুতা ইসলামের আবির্ভাবের কিছুদিন পর থেকে শুরু হয়েছিল, আর কখনো শেষ হয়নি। হবেও না। রাসুল সা: এর ইন্তেকালের ১১৮ বছর পর ৭৫০ সালে আব্বাসীয় খেলাফত শুরু হলে প্রথমেই তারা উমাইয়া খেলাফতের প্রায় সকল খলিফার কবর ভেঙে ফেলে, ইসলামের প্রাথমিক যুগের মহান শিক্ষার আলোকে তাদের দেহাবেশেষের পর্যন্ত অবমাননা করে। ওই বংশের যাদের পেয়েছে, আব্বাসীয়রা তাদের কল্লা কেটেছে। বলতেই হবে, এসবই ইসলামের মহিমা! স্বর্ণযুগ! হুজুররা যদি শরা-শরিয়ত, মহিলাদের হায়েজ-নেফাস, সাওয়াব-গুনাহ, বেহেশত-দোজখের বয়ানের সাথে ইসলামের ইতিহাসে কাটকাটির কাহিনি শোনাতো, তাহলে ভালো হতো।

১৪০০ বছর পর ইসলাম ও মুসলমানদের কী দশা দাঁড়িয়েছে, তা জানার জন্য রাশি রাশি কিতাব পড়ার আবশ্যকতা নেই। ধারণা করাই যথেষ্ট।
এসব বাদ দিয়ে আমি এখন ইরানের দোয়ায় ইসরায়েলের ধ্বংস দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।