শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

করোনা চিকিৎসার কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়ে ফের অনুসন্ধান দুদকের


প্রধান অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের (ইআরপিপি) আওতায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার কাজে মাস্ক-পিপিই, হাসপাতালের সরঞ্জামাদি, সচেতনতায় বিজ্ঞাপন ও অ্যাপ নির্মাণে দুর্নীতি। করোনা মহামারি-২০২০ এর পাঁচ বছর পর অনুসন্ধানের জন্য এবার পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করেছে দুদক।

সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে টিমের অপর সদস্যরা হলেন– সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান, মো. শাহজাহান মিরাজ, মো. ফারুক হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।

মামলার এজাহারে জেএমআই গ্রুপের ২০ হাজার ৬১০টি সরবরাহ করা মাস্ক এন৯৫ ছিল না– এমন প্রমাণ পাওয়ার পরও অদৃশ্য কারণে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন আসামিরা। ওই অভিযোগের সঙ্গে এবার নতুন অভিযোগ যুক্ত হয়েছে। যা আমলে নিয়ে নতুন করে অনুসন্ধানে নেমেই নতুন টিম গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছেন বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তলবি চিঠিতে যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে– ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রজেক্টেন (ইআরপিপি) আওতায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান জাদিদ অটো মোবাইলস আইএআই (জাহিদ), এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড, এসআইএম কর্পোরেশন, ইনশা ট্রেড কর্পোরেশন, ব্রেইন স্টেশন ২৩ লিমিটেড ও ই-মিউজিকের মাধ্যমে ২০২০ সালে মাস্ক, পিপিই এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় সংক্রান্ত অনুমোদনপত্র, বরাদ্দপত্র, বাজারদর যাচাই প্রতিবেদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিল করা দরপত্রের কপি।

আরও চাওয়া হয়েছে ওই প্রজেক্টের দাখিল করা রেকর্ডপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন ও দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহ করা মালামাল আমদানি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, মালামাল রিসিভ কমিটি গঠন, মালামাল বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, বিল রেজিস্ট্রার, বিল ভাউচারসহ এসব মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি। এসব রেকর্ডপত্র জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যের মহাপরিচালককে অনুরোধ করেছে দুদক টিম।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার নিমিত্তে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠিত অনুসন্ধান দল দুদক আইন ও বিধি অনুসরণ করে কাজ শুরু করেছে। অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারব।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ যৌথভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। এতে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকও অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়। ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের (ইআরপিপি) আওতায় মাস্ক-পিপিই, হাসপাতালের সরঞ্জামাদি, সচেতনতায় বিজ্ঞাপন ও অ্যাপ নির্মাণে ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও পিডি ডা. ইকবাল কবির পদে পদে নানা অনিয়ম করেন। কাজ পাওয়া ছয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে।

বিশ্বব্যাংকের এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন সম্প্রতি দুদকে জমা হয়েছে।