রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

কালীগঞ্জে আঙ্গুর চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শুরু হয়েছে অঙ্গুর চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ০.৫৯ হেক্টর জমিতে হচ্ছে এই আঙ্গুর চাষ। বিশেষ করে তরুণ কৃষি উদ্যাক্তরা আঙ্গুর চাষে রঙিন স্বপ্ন বুনছেন। আঙ্গুর চাষ পরিমাণে কম হলেও বিদেশি এই ফলটি চাষে সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি উদ্যোক্তারা। কালীগঞ্জ উপজেলায় চাষ হওয়া আঙ্গুরের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য খুব ভালো মানের। সুস্বাদু এই ফলের ফলন দেখে কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমাদের দেশে ফল চাষের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। কেননা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফল উৎপাদনের অনুকূলে। বাড়ির আঙিনায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়, খাস ও পতিত জমিতে ফলদ বৃক্ষ রোপণ করলে প্রতিটি বাড়ি হবে পুষ্টিতে ভরপুর। সৃষ্টি হবে ছোট-বড় ফল বাগানের এবং সমাজে আসবে উন্নয়নের ছোঁয়া। এ ক্ষেত্রে যুবসমাজ আঙ্গুর চাষের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেতে পারে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে জানা যায়, বনখিদ্দা গ্রামের আবু জাহিদ ১৩ শতাংশ জমিতে, গোমরাইল গ্রামের ১৩ শতাংশ জমিতে ইমদাদুল হক, বড় ঘিঘাটি গ্রামে ১৩ শতাংশ জমিতে নজরুল হক, একই গ্রামের নুরুল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে, ২ শতাংশ জমিতে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাখাওয়াত শেখ, ঘোপপাড়া গ্রামের আল-আমিন হোসেন ৭ শতাংশ জমিতে, একই গ্রামের ইমরান হোসেন ১৭ শতাংশ জমিতে এবং নলভাঙ্গা গ্রামে মমিনুর রহমান ১৩ শতাংশ জমিতে আঙ্গুর চাষ শুরু করেছেন। চাষকৃত আঙ্গুরের ক্ষেত গুলোতে একোলা, বাইকুনুর, জয় সিডলেস, ভ্যালেজ, ব্লাক ম্যাজিক, সিলভা, অনুশুকা, মালিকচুমাং, ভাইকিং, অস্ট্রেলিয়া কিং, আর্লিরেডসহ নানা প্রজাতির আঙ্গুরের চারা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে চাষ করছেন এই সব কৃষকেরা। বাগান গুলোতে প্রচুর পরিমানে থোকাই থোকাই আঙ্গুর ঝুলে আছে কিন্তু মিষ্টতা ও বাজারজাতের সহজীকরণের উপর নির্ভর করছে সম্ভবনাময় এই চাষের ভবিষ্যত। এব্যাপারে কৃষি অফিস চাষীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার আঙ্গুর চাষী নুরুল ইসলাম জানান, আমার ৩৩ শতাংশ জমিতে ২৫ মাস আগে ১৬ জাতের আঙ্গুরের চারা রোপন করেছি। এপর্যন্ত আমার প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এখন ফুল দেখা যাচ্ছে, ভালো বাজার পেলে আশা করছি লাভোবান হবো।
চাষি ইমরান হোসেন বলেন, ১৬ শতাংশ জমিতে ৭ প্রকার জাতের ৮০টি আঙ্গুর গাছ আছে আমার বাগানে। ৩১০ টাকা কেজি দরে প্রায় ২০ কেজি আঙ্গুর ইতিমধ্যে আমি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছি। অপর একজন চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি পারীক্ষামূলকভাবে অল্প জমিতে চাষ করছি। সবকিছু ভালো থাকলে আগামীতে বড় আকারে চাষ করবো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন মাঠে অল্প অল্প পরিমান জমিতে বিভিন্ন জাতের আঙ্গুরের পরীক্ষামূলক চাষ চলছে। আঙ্গুরের মিষ্টতা ও আমাদের আবহওয়ার সাথে খাপ খায় এমন জাত নির্ধারণ করে পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে চাষ বাড়ানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছি। উৎপাদন এবং বাজারজাত প্রক্রিয়া সহজজাত করতে পারলে এই উপজেলায় ভবিষ্যতে আঙ্গুর চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আমি মনে করি। এখানে মাটি ও জলবায়ুতে আঙ্গুরের ফলন কেমন হয় তা বুঝতে নজরে রেখেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে এখানে আঙ্গুর চাষ সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।