রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

খাগড়াছড়িতে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও, অর্থদন্ড

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সরকারি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী জুঁই (ছদ্মনাম)। বয়স কেবল ১৫ বছর ৯ মাস। অথচ আগামী সোমবার তার বিয়ে এবং রবিবার গায়ে হলুদের দিন ধার্য্য। সব আয়োজনও চূড়ান্ত প্রায়। অতিথিদের নিমন্ত্রণের পালাও শেষ। এমন খবর পেয়ে ছুটে গেলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়। বিয়ে ভেঙ্গে দিলেন। বর ও কনের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করলেন।
বর ও কনের উভয়ের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকায়।বরের বাড়িতে সাজানো হচ্ছে প্যান্ডেল, সাজসাজ রব। বর ইদুল হাসান (২৯), চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাটে সবজির ব্যবসা করেন তিনি। কনের প্রাপ্ত বয়স না হলেও দুই পরিবার সম্মত হয়েছিল এই বিয়েতে।
শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তিনি সদর থানা পুলিশের সহায়তায় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুস্মিতা খীসাকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর গঞ্জপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায়।
অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, বর ও কনের বাড়ি একেবারেই পাশাপাশি। বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। রান্নার সরঞ্জাম এসে গেছে, বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে বিয়ের কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক। জন্মসনদ ঘেঁটে বাল্য বিয়ের প্রস্তুতির সত্যতা পান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
কনে জুঁই জানায়, সে এই বিয়ে করতে চায় না। তার ইচ্ছে আরও পড়াশুনা করবার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। বর ও কনের পরিবার নিজেদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবে না বলে মুচলেকা দেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় বর ও কনের পিতা উভয়কে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় বলেন, ‘নিজের অপরাধ স্বীকার করায় প্রাথমিকভাবে উভয় পরিবারকে সতর্ক করে মুচলেকা নেওয়ার পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে ভবিষ্যতে যেন জুঁইকে (ছদ্মনাম) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে দিতে না পারে সেইজন্য স্থানীয় গণমান্য, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে।