বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ৭দিন পর ২৭ ক্ষতিগ্রস্ত পেলেন জেলা প্রশাসনের ত্রাণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : অবশেষে ৭দিন পর স্বনির্ভর বাজারে ক্ষতিগ্রস্তরা পেলেন জেলা প্রশাসনের ত্রাণ। এখনো কোন ধরনের সহযোগিতা পাননি খাগড়াছড়ির ক্ষমতাশালী অর্থ ভান্ডার প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদের। যদিওবা ৩০ কিলোমিটার দুরে ক্ষতিগ্রস্ত গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্তদের ভাগ্যে এক দিন পর সাড়ে ১৩ লাখ নগদ অর্থ ও চাউলের ভান্ডার জুটেছে। অথচ জেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৫০ গজ দুরে স্বনির্ভর বাজার।কারণ গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্তরা পাহাড়ি ও খাগড়াছড়ি সদরে ক্ষতিগ্রস্তরা হিন্দু মুসলিম ও বড়ুয়া।
শুক্রবার বিকালে খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ২১ পরিবারসহ জেলা সদরে ২৭ মুসলিম, হিন্দু ও বড়ুয়া পরিবারকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম এ সব সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেন। এ সময় আরো সহযোগিতার জন্য আশ্বাস দেন। এ সময় পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়সহ প্রশানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১ লা অক্টোবর বিকালে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করার জন্য ৩০ কেজি করে চাউল নিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রত্যাখান করে।
এক স্কুল ছাত্রীকে কথিত ধর্ষনের অভিযোগে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ডাকা অবরোধ চলাকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে তান্ডবলীলা চলে। সন্ত্রাসীরা ঐ বাজার ও মহাজন পাড়ায় হিন্দু, মুসলিম ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ২৭ ব্যবসায়ীর দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। কিন্তু প্রশাসনের কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। হামলায় আহত বাঙালিদের পাশেও কেউ দাঁড়ায়নি। পক্ষান্তরে খাগড়াছড়ি সদরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ব্যর্থ হয়ে জেলার গুইমারায় সহিংসতা সৃষ্টি করে বিশেষ মহলটি। এ ঘটনায় ঐ দিন বিকালেই ছুটে যান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ১লা অক্টোবর আবার খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান ত্রাণের ভান্ডার নিয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ও আহতদের পিছলে এ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লাখ নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। একই ভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্ত দু:খজনক হলেও সত্য জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে কাউকে পাওয়া যায়নি। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত স্বনির্ভর বাজারটি জেলা পরিষদ থেকে মাত্র ৫০ গজ দুরে। এ ধরনের বৈষম্যে সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বতর্মানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের পরিষদ। তার মধ্যে ৪জন বাঙালি সদস্য। কিন্ত সাত দিনের সদস্য মাহবুল আলম ছাড়া চেয়ারম্যানসহ কোন সদস্য খবর নেয়নি।
উল্লেখ, কথিত এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের ইস্যু সৃষ্টি করে একটি মহল গত বৃস্পতিবার থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা চালায়। এতে গুইমারা তিন পাহাড়ি নিহতসহ জেলায় অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড়ি বাঙালি আহত হয়। এর মধ্যে একজন মেজরসহ সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্য ও ওসিসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে সেনাবাহিনীর গাড়ী ও এম্বুলেন্সে হামলা হয়েছে। মহাজন পাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে।