শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

গণমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকাই সরকারের প্রত্যাশা

আবুল কালাম আজাদ মজুমদার : অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো তথ্যই আ জকাল গোপন রাখা যায় না। কোনো না কোনো মাধ্যমে তা ঠিকই প্রকাশ পেয়ে যায়। হোক তা মূলধারার গণমাধ্যম, কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের স্ক্রলে কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সংবাদ হিসেবে প্রতিদিন আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে হাজারো তথ্য। রাষ্ট্র বা অন্যান্য শক্তিশালী সত্তা বা ব্যক্তির কাছ থেকে প্রভাব বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই যদি একজন সাংবাদিক এই তথ্য আমাদের সরবরাহ করতে পারেন তবেই তাকে আমরা বলতে পারি মুক্ত সাংবাদিকতা। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য এই মুক্ত বা স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য একটি বিষয়। মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশটি হবে এমন যেখানে একজন সাংবাদিক সহজেই ক্ষমতাকে — সেটা হোক সরকার কিংবা রাজনৈতিক দল — প্রশ্ন করতে পারবেন এবং কারো দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না। তিনি যে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রচার করবেন তা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্টি স্বার্থে ব্যবহার করা হবেনা না, এটা নিশ্চিত করতে পারা সাংবাদিকের নৈতিক কর্তব্য।

আজ এই কথাগুলো যখন বলছি, তার একদিন পরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। বাংলাদেশে এখন সাংবাদিকতা কতটা মুক্ত এই প্রশ্ন অনেকের মনেই আছে। সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া সহজ কোনো বিষয় নয়। একটা দেশ, যেখানে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নকে পেশাদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে টানা দেড় দশক, সেখানে যখনই আপনি মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে যাবেন তখনই একদল সুযোগ সন্ধানী মানুষ এই যাত্রাকে নানা উপায়ে ভেস্তে দিতে চাইবে। তাই সাংবাদিকতাসহ গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়া একটি দেশে চাইলেও রাতারাতি মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকারের বাইরেও মালিক ও রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের একটি বড় ভূমিকা আছে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে।

অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রথম এবং সবচাইতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে সরকারই। জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ এর গণবিপ্লবের পর গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার এই সব বাধা অপসারণের নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার সমালোচনাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সবাইকে মন খুলে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। সমালোচনা হচ্ছেও। এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা করে দেদারসে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। নিকট অতীতে যা ছিল অকল্পনীয় বিষয়।

বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা গেছে অনেককেই শালীন-অশালীন নানা ভাষায় সরকার প্রধানকে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু এসব সমালোচনার কারণে সরকার কোনো আলোচক বা চ্যানেলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গোয়ন্দো সংস্থার কেউ কোনো চ্যানেলের ব্যবস্থাপককে ফোন করে হুমকি দেয়নি।

আমরা সবাই জানি, অতীতে সরকারের লোকজনই ঠিক করে দিতেন টকশোগুলোতে আলোচক হিসেবে কারা আসবেন কিংবা কারা আসতে পারবেন না। এখন এ ধরনের চর্চা বন্ধ করা হয়েছে। অতীতে এমনও হয়েছে কোনো একটা বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট কোন রিপোর্টার কাভার করবেন এটা সরকারের লোকজন ঠিক করে দিয়েছে। এখন এ ধরনের চর্চাও বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের কেউ কোনো টিভি চ্যানেল অথবা পত্রিকার অধিকর্তাকে ফোন করে এক দিনের জন্য বলেনি আগের রাতেই অ্যাসাইনমেন্ট শিট তাদের পাঠিয়ে দিতে। মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে। এখন অনায়াসে সরকারের সমালোচনা করে রিপোর্ট প্রকাশ করা যাচ্ছে। সরকারের নানা সিদ্ধান্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। এসব সমালোচনা, বিশ্লেষণ সরকারকে অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেও বাধ্য করছে।

বিগত বছরগুলোতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার পর কোনো ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়াই সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে আবির্ভূত হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার এই সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে আর কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা এই আইনে করা হয়নি। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুমোদিত হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে, আগের আইনের নিবর্তনমূলক ৯টি ধারা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আগের আইনের আওতায় করা ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় করা। ধারাগুলো বাতিল হলে এসব ধারায় করা কোনো মামলা থেকে গেলেও তা সয়ংক্রিয়ভাবে খারিজ হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে গুরুতর সাইবার হ্যাকিং ছাড়া অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের বিধান বাতিল করা হচ্ছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে নতুন এই আইন প্রণয়ন করা হলে দেশে সাংবাদিকদের আইনের মাধ্যমে হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে। দেশে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এটি হবে একটি বড় অগ্রগতি।

গত আট মাসে অনেক সাংবাদিককে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে জুলাই-আগস্টের সময়ে তাদের ভূমিকার কারণে। কিন্তু আপনারা জেনে থাকবেন এসব মামলা একটিও সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ দায়ের করেনি। কোনো ঘটনায় সংক্ষুদ্ধ কোনো পক্ষ মামলা দায়ের করলে তা গ্রহণে পুলিশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তদন্ত কালে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া গেলে কোনো সাংবাদিককে যেন গ্রেফতার বা হয়রানি না করা হয়। মামলার অভিযোগগুলো পর্যালোচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতে পারেন। চারজন সাংবাদিক এই মুহূর্তে কারাবন্দি রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। আদালত চাইলে তাদের বিষয়েও যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬৮ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। যদিও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল এবং ইস্যু একটি নিয়মিত বিষয়। সাংবাদিকদের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রথা চালু করার পর ৭,৮৬৬টি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে বাতিল হয়ে গেছে ৪,৯৩৫টি কার্ড। তবু এই বিষয়টিতে সরকারের সমালোচনা হওয়ায় সরকার এটি পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের কার্ড বাতিল হয়েছে তাদের আবার আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো মাত্র সাত জন আপিলের মাধ্যমে তাদের কার্ড ফেরত চেয়েছেন।

এই অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড যেখানে মূলত ব্যবহার করা হয়, সেই বাংলাদেশ সচিবালয় সম্প্রতি বিরাট এক অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই অগ্নি দুর্ঘটনার পর অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হলেও সাংবাদিকদের বিশেষ পাশ ইস্যু করে সেখানে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৭০জন সাংবাদিকের জন্য এধরনের পাশ ইস্যু করা হয়েছে। আপনারা জেনে থাকবেন অতীতে অনেক দলীয় কর্মীদেরও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে সচিবালয়ে সাংবাদিক নামধারী কিছু দালালের দৌরাত্ব্যে পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে সরকার নতুন করে সবার জন্য অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ লক্ষ্যে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নীতিমালাও ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত এই নীতিমালায় সাংবাদিকদের জন্য অবমাননাকর ও হয়রানিমূলক অনেক ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সুপারিশ আমলে নিয়ে স্থায়ী-অস্থায়ী কার্ডের বিধান বাতিল করে সবার জন্য তিন বছর মেয়াদি কার্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। আগের নীতিমালায় বলা হয়েছিল অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়ার অন্যতম কারণ সাংবাদিকরা সরকারের উন্নয়ন বয়ান প্রচার করবেন। নতুন নীতিমালায় এধরণের ভাষা পরিহার করা হয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে, নতুন এই নীতিমালা দেশে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আগের নিয়মে অ‍্যাক্রিডেটশন কার্ডধারী সাংবাদিককে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান ছিল, এই বিধানটিকে অসাংবিধানিক মনে করায় নতুন নীতিমালায় এ বিধান তুলে দেয়া হয়েছে।

নতুন নীতিমালা অনুসারে সাংবাদিকদের নতুন করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে কেবল একটা দুটো আইন ও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নীতিমালা সংশোধন করলেই দেশের সাংবাদিকতা মুক্ত হয়ে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ‘না’। দেশে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন সব মহলের সহনশীল আচরণ। সরকার এখানে একটি অংশীজন মাত্র। মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মীদের আচরণ। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে অনেক গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে। আমাদের পক্ষ থেকে কেবল একটুকুই নিশ্চিত করা সম্ভব সরকার এসব পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখেনি। যে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা দেখা গেছে তাদের বিপক্ষে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি গণমাধ্যমের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, কিংবা এসব পরিবর্তনে বাধা দেওয়া দুটোই এক ধরনের হস্তক্ষেপ। সরকার তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে এসব কাজ থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রেখে গণমাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনভাবে তাদের নিজেদের গণমাধ্যম পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকটি গণমাধ্যম অভিযোগ করেছে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মহল থেকে হুমকি-ধামকি পেয়েছে। এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় আপনারা দেখেছেন তিনটি পৃথক টেলিভিশন চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত হয়েছেন। একটি চ্যানেল অল্প কিছু সময়ের জন্য তাদের সংবাদ প্রচার বন্ধ রেখেছে। যদিও কোনো চ্যানেলেই এসবের আনুষ্ঠানিক কোনো কারণ জানায়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এ ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা মনে করি এই ঘটনায় সরকারকে দায়ী করা অনভিপ্রেত। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ চ্যানেলেগুলোকে তাদের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেনি। এই ঘটনার একদিন আগে এই তিন সাংবাদিক একজন উপদেষ্টাকে এমন কিছু প্রশ্ন করেছেন যা অনেকের কাছেই মনে হয়েছে উদ্দেশ্যমূলক। এসব প্রশ্নের জবাব সংবাদ সম্মেলনেই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকি। সংবাদ সম্মেলনের পর সরকার এ ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবুও সরকারের উপর দায় চাপিয়ে অনেকে পরোক্ষভাবে চ্যানেলগুলোর অন্যায় চাকুরিচ্যুতিকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যা অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকারের পক্ষে এই চাকুরিচ্যুতিকে ঠেকানো সম্ভব ছিলনা কেননা চ্যানেলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাধীনভাবে। এটাকে সেল্ফ সেন্সরশিপের সংজ্ঞায়ও ফেলা কঠিন, কারণ যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকিকে করা তিন সাংবাদিকের প্রশ্নের ন্যায্যতা অন্যায্যতা বিচারের সুযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে সবাই পাচ্ছেন।

দুর্নীতি, অন্যায় ও অপশাসন প্রতিরোধে জনগণের তথ্য জানার অধিকার প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকলীন সরকার শুরু থেকেই মানুষের এই অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। তবে সরকার সবসময় আশা করে গণমাধ্যমগুলোও এব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। মুক্ত গণমাধ্যমের ব্যাপারে সরকারের উদার নীতির সুযোগ নিয়ে মূলধারার অনেক গণমাধ্যমকেও সাম্প্রতিক সময়ে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। ফ্যাক্ট-চ্যাকিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এধরণের অনেক সংবাদ চিহ্নিত করেছেন যা জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে খর্ব করে। ডিজিটাল মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ ও গুজবের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সরকার গুজব প্রতিরোধে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে কিছুটা সাফল্যও এসেছে। তবে গুজবের বিপক্ষে লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা অনেক বড়। সরকারের একার পক্ষে এ ধরনের লড়াই কঠিন। অপতথ্য প্রতিরোধে সরকার যে উপায়টি সর্বপ্রথম বেছে নিয়েছে তা হচ্ছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যত বেশি সাংবাদিকের কাছে আমাদের তথ্যগুলো দেওয়া যায়। আমাদের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনগুলো সব সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। অনেক সময় সাধারণ মানুষ এসেও এসব সংবাদ সম্মেলনে আমাদের প্রশ্ন করেছেন। অন্য সবার মতো আমরাও বিশ্বাস করি, প্রশ্ন করা সাংবাদিকদের অধিকার। একারণে প্রিয় অপ্রিয় সব ধরনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত থেকেছি।

আমরা সবসময় চেয়েছি রাষ্ট্র, ব্যবসায়ী বা অন্য কোনো ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সাংবাদিকরা সত্য চর্চা করবে। কারো দ্বারাই তারা ব্যবহৃত হবেনা। মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে। সরকার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা আরো বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।

◾প্রবন্ধটি বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।