রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

গরুর খামার করে ভাগ্য বদলেছেন ঝালকাঠির সাইফুল

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

“ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়”—এ কথার বাস্তব প্রমাণ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তর মনোহারপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। প্রতিকূলতার মাঝেও দমে না গিয়ে আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল গরু খামারি হিসেবে।

সাইফুল ইসলাম একজন উচ্চশিক্ষিত যুবক। ২০০৮ সালে ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। নিয়মিত পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল তার পেশা। কিন্তু হঠাৎ করে তার বাবা ফয়জুল হকের মৃত্যুতে তাকে ঢাকার চাকরি ছেড়ে পরিবারকে সামলাতে গ্রামে ফিরে আসতে হয়।

গ্রামে ফিরে প্রথমে তিনি একটি টাইলসের দোকান খোলেন। ব্যবসায় কিছুটা সফলতাও পান, কিন্তু ২০১১ সালের দিকে বাজারে মন্দা দেখা দিলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তখনই সাইফুল চিন্তা করেন বিকল্প কিছু করার। তিনি ভাবেন, গ্রামে থেকে কীভাবে উপার্জনের ব্যবস্থা করা যায়। নিজের জমিজমা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গরুর খামার করার।

প্রথম দিকে কাজটি সহজ ছিল না। অভিজ্ঞতা না থাকায় নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কখনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় জটিলতা দেখা দেয়। তবে সাইফুল হার মানেননি। তিনি স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের সাহায্য নেন, ইউটিউব ও অনলাইন থেকে নানা ভিডিও দেখে নিজে শিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি গরুর লালন-পালন ও ব্যবসা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করেন।

বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৭টি গরু। এর মধ্যে ৪টি গরু কুরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি গরু সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ও উন্নত খাবারে বড় করা হয়েছে। সাইফুল জানান, তিনি গরুর খাদ্য তালিকায় প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর উপাদান ব্যবহার করেন। এতে গরু দ্রুত ও সুস্থভাবে বড় হয় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, “সাইফুলের খামার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। আমরা তাকে টিকাদান, চিকিৎসা, খাদ্য পরিকল্পনা এবং খামারের অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তার মতো উদ্যোক্তা যুবকদের জন্য অনুকরণীয়।”

সাইফুল ইসলাম জানান, ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় পরিসরে খামার পরিচালনা করতে চান। শুধু গরু নয়, তিনি ছাগল ও হাঁস-মুরগির খামারও চালু করার পরিকল্পনা করছেন। তার মতে, “দেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও সাহস থাকলে গ্রামের মাটিতেই হাজারো সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।”

স্থানীয় তরুণদের অনেকেই সাইফুলকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই তার খামারে এসে পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউবা খামার শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাইফুলের এই সফলতা শুধু তার একার নয়—এটি একটি গ্রামের, একটি উপজেলার, এমনকি পুরো দেশের জন্যই একটি অনুপ্রেরণার গল্প।