নিজস্ব প্রতিবেদক :
গাজীপুরে কারখানাগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে । এর পাশাপাশি বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। জেলার তিন শতাধিক ডাইং কারখানাসহ বেশির ভাগ কারখানা গ্যাস ও বিদ্যুৎ নির্ভর। তীব্র গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে নাকাল কারখানার মালিকেরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহারে খরচ বাড়ায়, উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কমেছে উৎপাদন সক্ষমতা। এমন পরিস্থিতিতে কারখানা সচল রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকেরা। গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সংকট নিরসনে তারা কাজ করছেন।
জানা গেছে, শিল্পঘন গাজীপুরে বেশির শিল্প কারখানা তৈরি পোশাক শিল্প। এছাড়া ওষুধ, চামড়া, সিরামিকের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ডাইং কারখানার প্রধান যন্ত্রাংশ বয়লার সচল রাখার জন্য যেখানে ন্যূনতম ৩ পিএসআই (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) গ্যাসের সরবরাহ দরকার, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ পিএসআই। এই মাত্রায় গ্যাস সরবরাহে কারখানার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ সময় বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।
ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বেশ কিছু দিন ধরে গ্যাস পাইপলাইনে চাপ কমে গেছে। গ্যাসের চাপ যেখানে থাকার কথা ছিল ১৫ পিএসআই, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১ পিএসআইয়ের নিচে। এছাড়া দিনে অন্তত ৫-৬ বার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতাও কমে গেছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় সময়মতো পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সাদমা গ্রুপের পরিচালক মো. সোহেল রানা বলেন, গ্যাস সংকট জেলার প্রায় সব কারখানায় রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে ঈদে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। সময়মতো বিদেশি শিপমেন্ট পাঠাতে না পারলে, অর্ডার ঝুঁকিতে পড়বে।
ইয়ন নিট কম্পোজিট কারখানার চেয়ারম্যান মাসুদ হাসান বলেন, গ্যাস বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ৩০ ভাগ উৎপাদন কমে গেছে, খরচ বেড়ে গেছে ৪০ ভাগ। এমনিতে বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থা ও নানা কারণে দেশের শিল্প কারখানার অবস্থা ভালো না। এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের সঙ্গে নিজেদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
হঠাৎ গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের ষড়যন্ত্র কী না এমন শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও পরিস্থিতি ভালো ছিল।
ম্যাট অটোমেশন কারখানার উদ্যোক্তা আহমেদ টিপু বলেন, দিনে ৫-৬ বার লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের উৎপাদন কমে গেছে। সময়মতো পণ্য দিতে পারছি না। এ অবস্থায় সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনে সরকার আমাদের প্রণোদনা দিলে আমাদের লোডশেডিংয়ের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডেও চাপ অনেকটা কমে যেত।
এ বিষয়ে এসি শিল্প গ্রুপ ও স্টাইলিশ গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বিজিএমই এর সদস্য সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গ্যাস-সংকট, মূল্যবৃদ্ধিসহ নানামুখী প্রতিকূলতার কারণে তৈরি পোশাক শিল্প জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে নানা কারণে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে। অনেকে বিকল্প উপায়ে বেশি খরচ করে ডিজেল জেনারেটরে উৎপাদন চালু রাখলেও রফতানিতে তারা নানা জটিলতার মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় কারখানা বাঁচাতে দ্রুত গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট দূর করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে গাজীপুর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সুরুজ আলম বলেন, গাজীপুরে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা আছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে অনেক জায়গায় গ্যাসের চাপ কম রয়েছে। সংকট নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, গ্যাস লাইনে সরবরাহ বাড়লে এ সমস্যার সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাশার আজাদ বলেন, কড্ডা গ্রিডে সমস্যা থাকায় জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে আগামী মাসে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গাজীপুরে মোট তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৭৬টি। নিবন্ধনবিহীন কারখানাসহ সব মিলিয়ে গাজীপুরে পাঁচ হাজারের মতো ছোট বড় কারখানা আছে। যার বেশির ভাগই গ্যাসের ওপর নির্ভর।