শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

গাজীপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাংবাদিককে হত্যা; আরেক সাংবাদিকের পা থেঁতলে দিল সন্ত্রাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় থাকতেন তুহিন। পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত সেদিন রাতে তাকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। তুহিন প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সেখানেই ঢুকে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

চায়ের দোকানের মালিক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনজন দুর্বৃত্ত আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাকে কুপিয়ে মেরে ফেলে। বাইরে আরও দুজন রামদা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও কুপিয়ে মারার হুমকি দেয়। আশপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।’

নিহতের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের কিছু সময় আগেও তিনি স্থানীয় সমস্যা নিয়ে পোস্ট করেছিলেন। রাত আটটার দিকে চৌরাস্তা এলাকায় রাস্তায় এলোমেলোভাবে পথচারীদের পারাপারের একটি ভিডিও শেয়ার করে তিনি লিখেছিলেন, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা।’ তার দুই ঘণ্টা আগে জয়দেবপুর রেলগেট এলাকায় ড্রেন সংস্কারের অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি ছবি দিয়েছিলেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান জানান, ‘ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্রও পেয়েছি। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। একজন সাংবাদিককে এভাবে কুপিয়ে হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’

বাসন থানার ওসি শাহিন খান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

ইট দিয়ে সাংবাদিকের পা থেঁতলে দিল সন্ত্রাসীরা 
গাজীপুর মহানগরের সদর থানার কাছে প্রকাশ্যে এক সাংবাদিককে বেদম মারধর এবং ইট দিয়ে পা থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীদের কাছে বারবার আকুতি করেও আনোয়ার হোসেন সৌরভ নামের ওই সাংবাদিক রেহাই পাননি। এ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আনোয়ারের ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়। 
ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় আনোয়ারকে কয়েক দুর্বৃত্ত মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করছে, কেউ লাথি মারছে। কিছুদূর টেনে নেওয়ার পর এক সন্ত্রাসী আনোয়ারের পা ও শরীরে ইট দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে। তাঁর বুকের ওপর উঠে লাফাতে থাকে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, ইট দিয়ে পা থেঁতলে দেওয়ার পর এক পুলিশ সদস্য এগিয়ে যান। পরে আনোয়ারকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, আনোয়ারের পায়ে গুরুতর জখম হয়েছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় আনোয়ারের মা আনোয়ারা বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।