রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসাশেষে দেশের পথে বেগম খালেদা জিয়া

মুক্তবাণী অনলাইন : বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে সোমবার লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। -খবর বাসস’র।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি আছেন।

সোমবার যুক্তরাজ্য স্থানীয় সময় বিকাল সোয়া চারটার দিকে (বাংলাদেশ সময় সোয়া নয়টা) খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেটি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে।

কাতারে যাত্রাবিরতি শেষে আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এর আগে লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে বড় ছেলে তারেক রহমানের কিংস্টনের বাসা থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে হিথরো বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনালের ভিআইপি গেটে পৌঁছায়।

বিমানবন্দরের চার নম্বর টার্মিনালের ভিআইপি গেটে তাদের বিদায় জানান তারেক রহমান। এ সময় তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমানও ছিলেন।

খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে যুক্তরাজ্য বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হিথরো বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন। তারা বিএনপির নেত্রীকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় তাদের হাতে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে এসব নেতাুকর্মী বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছেন বলে জানা গেছে।

লন্ডন অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লন্ডন থেকে ঢাকার যাত্রাপথে দোহায় যাত্রাবিরতি আছে।

শিডিউল অনুযায়ী বিশেষ বিমানটি দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায়। সেখানে জ্বালানি নেয়ার জন্য এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ওই একই রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। তার অসুস্থতার খবর পেয়ে কাতারের আমির এই বিশেষ বিমান পাঠিয়েছিলেন। এবারও সেই বিশেষ বিমানে করেই আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আশা করছি সময়মতোই উনি (খালেদা জিয়া) ঢাকায় পৌঁছাবেন। মির্জা ফখরুল দলের তরফ থেকে অনুরোধ করেছেন, যানচলাচল যাতে নির্বিঘ্ন থাকে, সেজন্য নেতা-কর্মীরা যেন সড়কে না নামেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কালকে একটি বিষয়ে এসএসসির পরীক্ষা আছে। আমি সকলকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান।’

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বরণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি। এর জন্য ঢাকায় গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয়েছে।

দেশে ফিরে বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের ৮০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি ফিরোজায় উঠবেন। সেখানে পুলিশ ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সব কিছু তদারকি করেছেন। এখন আমরা সবাই ম্যাডামের অপেক্ষায় আছি।’

উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, ছিলেন দীর্ঘদিনের পরিচর্যাকারী গৃহকর্মী ফাতিমা বেগমও। খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ফাতেমা তার সঙ্গে ছিলেন।

এ ছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্যও তার সঙ্গে রয়েছেন। তারা হলেন: মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও মোহাম্মদ আল মামুন।

লন্ডনের বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসক জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা সেখানে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেন।