বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জনতা ব্যংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলমসহ ৬৮জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চট্টগ্রামের বিতর্কিত শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম)-সহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এর মধ্যে একটি মামলায় গ্রুপটির কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেক মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে এই মামলাগুলো দায়ের করেন। দুদক চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে মামলা দু’টি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের সাধারণ বীমা ভবন করপোরেট শাখা থেকে এই ঋণ ছাড় করা হয়েছিল।

দু’টি মামলার মধ্যে একটিতে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ২ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৮ টাকা ৪০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে দুদক। এ মামলায় সাইফুল আলম মাসুদকে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্দুল্লাহ হাসান, সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোাবাল ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল আলমসহ এসআলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আরও ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংকিং বিধি লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন, নবায়ন ও সীমা বৃদ্ধি করেন। পর্যাপ্ত জামানত, লিখিত পরিশোধের অঙ্গীকার বা পরিচালকদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এমনকি অনুমোদিত সীমার বাইরে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল।

তদন্তে দেখা গেছে, বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ইচ্ছেকৃতভাবে বেশি দেখানো হয়েছে, অ্যাকসেপ্টেন্স কমিশন আদায় করা হয়নি এবং প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পুনঃঅর্থায়ন (রিফাইন্যান্সিং) সুবিধা নেওয়া হয়েছে। ঋণের টাকা সংশ্লিষ্ট গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়। সিসি (হাইপো), এলটিআর, পিএডি এবং আইএফডিবিসি সুবিধার আওতায় আসল ও সুদসহ মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অপর মামলা এস আলাম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের নামে ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে সুদে-আসলে ১ হাজার ১৫২ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ১০৭ টাকা ৫২ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

এ মামলায় এস আলাম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক ও সাইফুল আলম মাসুদের ভাই আব্দুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌকে প্রধান আসামি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসকাত আহমেদসহ ৩৬জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ২৯ জনই জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা।

উভয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে, তদন্ত অব্যাহত থাকবে এবং এ ঘটনায় আরো কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।