সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন : দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী যদি স্বাস্থ্যসেবা না পায় তা হলে রোগীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সম্প্রতি দেশে জলাতঙ্ক রোগ দেখা দিয়েছে, যা বর্তমানে বিদেশেও রয়েছে। কিন্তু রোগের উপশমের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার অভাব দেখা যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক রোগ। যা প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা নেই। একবার জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু নিশ্চিত। তাই টিকা নিয়ে রোগটি প্রতিরোধ করতে হয়। এ জন্য টিকা ও অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু দেশের অন্যতম মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে ভ্যাকসিনের অভাব ও ভোগান্তির চিত্র। যেখানে রোগীর জীবন ও মৃত্যু নির্ভর করছে সেখানে সংশ্লিষ্টদের যেন কোনো দায়ভার নেই। আর দায়ভার না থাকার কারণে দেশে অহরহ এ ধরনের রোগের কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না রোগীরা। একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী কুকুর, বিড়াল বা অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের শিকার হন। এই রোগীরা হাসপাতালে ছুটে এলেও ভ্যাকসিনের অভাবে তারা নানাবিধ শঙ্কার মধ্যে থাকে। জরুরি বিভাগে দীর্ঘ লাইন, অপ্রতুল সরবরাহ এবং বাইরের দোকান থেকে উচ্চমূল্যে ভ্যাকসিন কিনতে বাধ্য হন। এটাই যেন রোগের ভয়াবহতার প্রকৃত চিত্র। সরকারের এই অব্যবস্থাপনা এবং ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা রোগীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। বিশেষ করে যারা অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম, তারা ভ্যাকসিনের জন্য হাহাকার করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। ফলে জলাতঙ্ক রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে।
হাসপাতালের নোটিস বোর্ডে জানানো হয়েছে-‘জাতীয় জলাতঙ্ক সেন্টারে আগত কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর কামড়/আঁচড়ে আক্রান্ত রোগী ও তার স্বজনদের জানানো যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) থেকে র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন বরাদ্দ বা সরবরাহ না থাকায় এই সেন্টার থেকে আপাতত র‌্যাবিস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। ‘সিডিসি’র সরবরাহ বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে রোগীদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। কিছু রোগী বাইরের দোকান থেকে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে আনলেও, বেশিরভাগের জন্য সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। যেখানে একদিকে রোগ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অভাব, অন্যদিকে সরবরাহে অনিয়ম। শুধু যে ভ্যাকসিনের অভাবই নয়, বরং এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ভঙ্গুরতার প্রতিফলন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাব থাকায় রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী সরকারের নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। প্রয়োজনের সময় যথাযথ সরবরাহ ও পরিকল্পনা না থাকায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য মানুষ।
আমাদের দায়িত্ব হলো এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য উত্তরণের পথ চিহ্নিত করা এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া। সংশ্লিষ্টদের উচিত, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা, পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পশু নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি সেবা উন্নত করার মাধ্যমে এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটি সুস্থ ও নিরাপদ সমাজ গড়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সমন্বয় অপরিহার্য। সরকারের উচিত, অপ্রত্যাশিত এই ভ্যাকসিন সংকটের দায় এড়ানোর পরিবর্তে দৃঢ় মনোবল ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা। জীবন মূল্যবান এবং এর নিরাপত্তায় আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের জলাতঙ্ক রোগীর ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সংকটের সমাধানে এগিয়ে আসা জরুরি।