মুক্তবাণী স্পোর্টস ডেস্ক : সকালে ৪৫ রানে ৩ উইকেট। সেখান থেকে দিনশেষে আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই ২৯২ রান। তাতে আবার দুই সিনিয়রের সেঞ্চুরি। গল টেস্টে প্রথম দিনকে শুধু নিজেদের করে দাবি করতেই পারে বাংলাদেশ।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ পূর্ণ দাপটের সঙ্গেই টেস্ট সিরিজের প্রথম দিন শেষ করল। ওয়ানডের অধিনায়কত্ব হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্তর এটাই কোনো প্রথম ম্যাচ। টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল যে কায়দায় গল টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন তা দেখে মনে হচ্ছিল বোলিং এন্ডে শ্রীলঙ্কান বোলার নয়, তার ওয়ানডে অধিনায়ক কেড়ে নেওয়া কেউ দাঁড়িয়েছিলেন! তার বিরুদ্ধেই যেন ‘শোধ’ তুললেন শান্ত একটু ‘অশান্ত’ কায়দায়। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তার এই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই। পঞ্চম এবং শেষটাও তাদের বিরুদ্ধেই। দুটোই আবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে। ২০২১ সালে পাল্লেকেলের পর এবার গল স্টেডিয়ামে। ৬ টেস্ট সেঞ্চুরির দুটোই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। তাও আবার মাত্র ৭ টেস্টে। শ্রীলঙ্কাকে এখন প্রিয় প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবতেই পারেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রতিপক্ষ যখন শ্রীলঙ্কা তখন মুশফিকের ব্যাটও চওড়া হাসিতে অভ্যস্ত। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই গলে। সময়টা ছিল ২০১৩ সাল। পুরোনো স্মৃতির সেই মাঠে মুশফিকের ব্যাটও আরেকবার আনন্দের হাসিতে হাসল। টেস্টে এটি তার ১২ নম্বর সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চতুর্থ। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি পর টেস্টে মুশফিকের ব্যাটে রান খরা যাচ্ছিল। মাঝের সাত টেস্টে সেঞ্চুরি তো দূরের কথা, হাফসেঞ্চুরিও ছিল না তার। সমালোচনা উঠছিল সেরা সময় বোধকরি পার করে এসেছেন মুশফিক। সব শঙ্কা ও সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে গলের প্রথম দিন মুশফিক আরেকবার জানিয়ে দিলেন, এখনো তার ব্যাটে অনেক রান আছে। গল স্টেডিয়ামের কোনো একটা কোনায় নিজের নামে করার দাবি এখন মুশফিক তুলতেই পারেন। এই মাঠে তিন টেস্টে তার সবমিলিয়ে রান এখন ৪২৪। ডাবল সেঞ্চুরির পিঠে এবার সেঞ্চুরি নিয়ে গলকে আরেকবার ‘আপন’ করে নিলেন মুশফিক।
দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশের তিন উইকেট ফেলে দিয়ে শ্রীলঙ্কা স্বপ্নের শুরু করে। কিন্তু পরের দুই সেশনে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিক রহিমের ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম দিন পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিল বাংলাদেশ।
বলা হচ্ছিল গলে স্পিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। প্রথম দিনের স্কোরকার্ড জানাচ্ছে চ্যালেঞ্জটা বেশ ভালো কায়দায় জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। গোটা দিনের ৯০ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কার তিন স্পিনার সবমিলিয়ে করেন ৬৪ ওভার। এর মধ্যে সাফল্য পান শুধু থারিন্দু রত্নায়াক। ৩২ ওভারে ১২৪ রানে ২ উইকেটের তার এই বোলিং বিশ্লেষণ জানাচ্ছে সাফল্যটা বেশ খরুচে।
মুশফিক ও নাজমুল দুজনেই দক্ষতার সঙ্গে শ্রীলঙ্কান স্পিন সামাল দেন। সামনের লেন্থে পড়া বলে পা বাড়িয়ে ব্যাটকে সঠিক জায়গায় রেখে ডিফেন্স করলেন। আবার পেছনের লেন্থে পড়া বলে ব্যাকফুটে গিয়ে অ্যাটাকিং স্ট্রোক খেলেন।
গলের উইকেটে বাংলাদেশের এই দুই সিনিয়র ব্যাটার সারা দিন যেন উপভোগের মন্ত্রে ব্যাটিং করে গেলেন। আজ দ্বিতীয় দিন গলে আরেকবার এই ব্যাটিং উপভোগ করতে পারলে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের হাসিটা আরো চওড়া হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯২/৩ (৯০ ওভারে, সাদমান ১৪, এনামুল ০, মুমিনুল ২৯, নাজমুল ১৩৬, মুশফিক ১০৫)। (প্রথম দিন শেষে)
