রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

টঙ্গীতে আওয়ামীপন্থী দুর্নীতিবাজ আলাউদ্দিন মিয়ার দখলে শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি

টঙ্গী (গাজীপুর)প্রতিনিধি:
গাজীপুরে র‌্যাবের হাতে আটক আলোচিত আওয়ামী লীগপন্থী দুর্নীতিবাজ আলাউদ্দিন মিয়ার দখলে প্রায় শত কোটি টাকার সরকারি জমি। শিল্প নগরী টঙ্গীর বেক্সিমকো রোডে এসকেএফ ওষধ কারখানার পেছনে রাজউকের বেশ কয়েকটি শিল্প প্লট দখল করে বিশাল শেড ও দোকানপাট নির্মাণ করে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন এই শিক্ষক নেতা। পাশেই শিল্প প্লটে পুকুর খনন করে মৎস্য খামারও গড়ে তুলেছেন।


স্থানীয়রা জানান, ভারি শিল্প কারখানার জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান সরকার ষাটের দশকে (১৯৬০) আউচপাড়া, কাঠালদিয়া, মাছিমপুরসহ কয়েকটি মৌজায় জমি অধিগ্রহণ করে। সাবেক ডিআইটি যা বর্তমানে রাজউক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ওই শিল্প জোনে বহু কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্প জোনের কিছু জমি খালি বা পতিত থাকায় বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা দখল করে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন। স্থানীয় আউচপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা মতিউর রহমান বেপারি জানান, এসকেএফ ওষধ কারখানার পেছনের জমি একসময় তাদের (মতি বেপারিদের) পৈত্রিক সম্পত্তি ছিলো। তৎকালীন সরকার নির্ধারিত শিল্প জোনের জন্য উক্ত জমি অধিগ্রহন করে। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)’ গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ও টঙ্গী পাইলট স্কুল এণ্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া এবং তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা এম এম হেলাল উদ্দিন রাজউকের শিল্প জোনের ওই জমি নিজেদের পৈত্রিক জমি দাবি করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় প্রভাবে দখল করে নেয়। অথচ সেটি কখনই আলাউদ্দিন মিয়া বা তাদের পূর্ব পুরুষদের জমি ছিলো না বলে দাবি করেন মতিউর রহমান।


এদিকে একাধিক ভুক্ত ভোগী জানান, আলাউদ্দিন-হেলাল সহোদরের জমির আশপাশে কেউ জমি কিনলে তাদেরকে মোটা অঙ্কের চাঁদা না দিয়ে কেউ বাড়ি-ঘর বা কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারতেন না। জমির মালিকানা দাবি করে তারা অহেতুক নির্মাণ কাজে বাধা দিতেন। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে আপসরফা হলে মালিকানার দাবি প্রত্যাহার করতেন। টঙ্গীর সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভেতর অধ্যক্ষের কক্ষেই এসব দেন-দরবার ও অবৈধ লেনদেন করতেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছু দিন আগেও স্থানীয় বড় দেওড়া মৌজায় একজন সাংবাদিকের বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পাঁচ লাখ টাকার চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। আউচপাড়া মৌজায় অপর একজন সাংবাদিকের কাছ থেকেও একইভাবে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেন আলাউদ্দিন-হেলাল সহোদর। ওই সাংবাদিক বলেন, আমি পবিত্র হজ্বে গিয়ে গিলাব ধরে কান্না করে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এদিকে টঙ্গী পাইলট স্কুল এণ্ড গার্লস কলেজের পশ্চিম পাশের দুই জন জমির মালিককেও হয়রানি করে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। স্কুলের পশ্চিম পাশে একটি ডেভলপার কোম্পানির নির্মাণ কাজ জোরপূর্বক দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ রেখেছিলেন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন। পরে স্কুলের মসজিদের জন্য কথিত অনুদানের নামে ৪০ লাখ টাকায় রফাদফা হলে পাশের ওই জমিতে স্কুলের মালিকানার দাবি প্রত্যাহার করে নেন। মসজিদের নামে ওই টাকা নেয়া হলেও পরবর্তীতে মসজিদের উন্নয়নে লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।


উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধীদের একাধিক মামলার আসামী অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়াকে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় টঙ্গী কলেজ রোড থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। পরে ওই দিনই তাকে উত্তরা পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে এ থানার একটি হত্যা মামলায় বুধবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনসচার্জ মো. হাফিজুর রহমান জানান, আলাউদ্দিন মিয়ার নামে উত্তরা পশ্চিম থানায়ও মামলা রয়েছে। আলাউদ্দিন মিয়াকে উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায়ও শোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন জানানো বলে ওসি জানান।