আদালত প্রতিবেদক: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় আজও ট্রাইব্যুনাল এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, দিনভর এভাবেই তারা নিয়োজিত থাকবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশপথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবির বিশেষ নিরাপত্তা টিম অবস্থান নিয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও রয়েছেন। পথচারী থেকে শুরু করে আইনজীবী ও সাংবাদিক—সবার পরিচয় যাচাই করে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের ভেতর ও বাইরে কড়া নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচলেও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, রায় ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ জমা দেয়। তবে রায়ে দুটি অভিযোগে ছয়টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রথম অভিযোগে তিনটি ঘটনা:
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান।
ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে ফাঁসি দেওয়ার উসকানি ও আদেশ।
এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
দ্বিতীয় অভিযোগে তিনটি ঘটনা:
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ। এতে ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় এবং হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এর ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
একই দিনে সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
উভয় অভিযোগে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।