মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দিল্লির দিকে ধেয়ে আসছে ইথিওপিয়ার আগ্নেয়গিরির ছাই, বিমান চলাচল ব্যাহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় ১২,০০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো উত্তর ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে। এর ফলে বের হওয়া ছাই ১০০–১২০ কিমি/ঘণ্টার বেগে ভারতসহ আশেপাশের দেশগুলিতে পৌঁছেছে। বিশেষ করে দিল্লিতে আগ্নেয়গিরির ছাই প্রবেশের কারণে বিষাক্ত বায়ু সংকট আরও বেড়ে গেছে এবং বিমান চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রবিবার সকালে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলেও ছাইয়ের মেঘ রাতের মধ্যে দিল্লিতে পৌঁছায়। এই সময় বিমান চলাচলে বিরতি এবং রুট পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতেও ছাইয়ের কারণে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

ছাইয়ের মেঘ প্রথমে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গুজরাটে প্রবেশ করে। এরপর রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন অধিদপ্তর (DGCA) বিমান সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেছে, যেন তারা ছাই-প্রভাবিত এলাকা ও ফ্লাইট স্তর এড়িয়ে ফ্লাইট পরিকল্পনা, রুটিং ও জ্বালানি ব্যবহার সামঞ্জস্য করে। এছাড়া, যেকোনো ছাইয়ের কারণে ইঞ্জিনে সমস্যা বা কেবিনে ধোঁয়া/গন্ধ দেখা দিলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেটও রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সতর্কতামূলক পরীক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ১১টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের মধ্যে নিউয়ার্ক–দিল্লি, নিউ ইয়র্ক–দিল্লি, দুবাই–হায়দ্রাবাদ, দোহা–মুম্বাই, দুবাই–চেন্নাই, দাম্মাম–মুম্বাই, দোহা–দিল্লি, চেন্নাই–মুম্বাই এবং হায়দ্রাবাদ–দিল্লি রুটের ফ্লাইটগুলো অন্তর্ভুক্ত।

ইন্ডিগো জানিয়েছে, তারা ছাইয়ের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং ফ্লাইট পরিচালনায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে প্রধানত সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂) রয়েছে এবং ঘনত্ব কম থেকে মাঝারি। যদিও এই ছাই AQI (বায়ু মানের সূচক)-এ তেমন প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি নেপাল, হিমালয় ও উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞ্চলে SO₂ স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে। ছাইয়ের কিছু অংশ পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে পরে চীনের দিকে প্রবাহিত হতে পারে।

আফার অঞ্চলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের সময় তারা একটি বিকট শব্দ শুনেছেন, যা শক ওয়েভের মতো অনুভূত হয়েছে। এক বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন, “মনে হচ্ছিল যেন হঠাৎ বোমা ফেটে ধোঁয়া ও ছাই ছড়িয়ে পড়েছে।”

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলকানিস্ট প্রোগ্রাম জানিয়েছে, হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরির শেষ অগ্ন্যুৎপাত প্রায় ১২,০০০ বছর আগে ঘটেছিল, যা শেষ বরফ যুগের পরে শুরু হয়েছিল।