ইসলামীক ডেস্ক:
এটা পরিষ্কার কথা যে, আমাদের আকাবির ও উস্তাদ তথা সম্মানিত ওলামায়ে কেরামের কোনো স্বতন্ত্র আকিদাগত বা ফিকহি মাজহাব নেই। আকিদার ক্ষেত্রে আমরা ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত’-এর পথ এবং ফিকাহের ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাবের অনুসারী। তবে আহনাফ তথা আহলে সুন্নতের মধ্যে আমাদের আকাবিরদের একটি বিশেষ রঙ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর এই বৈশিষ্ট্য বা স্বাতন্ত্রকে ‘দেওবন্দিয়াত’ বলা হয়। এই বিশেষ রঙ বা রুচি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর সমষ্টি থেকে গঠিত-
১. ফিকহে হানাফির প্রতি গভীর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস, সেই মোতাবেক ফতোয়া ও আমল, পাশাপাশি হাদিস এবং সুন্নতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসা। একই সঙ্গে অন্যান্য ইমাম, মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিসদের প্রতি গভীর সম্মান এবং অন্তরে তাদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
২. এ ফিকহি ও ইলমি বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি সুফিয়া কেরামের নিসবত হাসিলের চেষ্টা বা অন্তত তাদের প্রতি সম্মান ও অন্তরে ভালোবাসা।
৩. এই সবকিছুর সঙ্গে সুন্নতের অনুসরণ এবং শিরক ও বিদাতের প্রতি তীব্র ঘৃণা এবং এ ক্ষেত্রে এক ধরনের দৃঢ়তা ও গায়রাত (ধর্মীয় হুঁশ-হুঁশিয়ারি)।
৪. উপরোক্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে সঙ্গে ‘ইলা-ই কালিমাতুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার চেতনা এবং এ পথে প্রাণ উৎসর্গ করার আকাঙ্ক্ষা। সুতরাং ‘দেওবন্দিয়াত’ হলো এই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে যে বিশেষ রঙ বা রুচি তৈরি হয়েছে, তারই একটি নাম। আমাদের এই ধারার আকাবির ও নেতা যেমন হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবি (রহ.) এবং হজরত মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহি (রহ.) এবং তাদের বিশেষ শাগরেদ ও মুরিদরা এই সবগুলো গুণাবলির সমন্বয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সাজিয়ে ছিলেন। যদিও এ বৈশিষ্ট্যগুলো এককভাবে অন্যান্য অনেক গোষ্ঠীতেও পাওয়া যায়।
আমি এটাও উল্লেখ করে দিতে চাই যে, দেওবন্দিয়াত সম্পর্কে এ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা আমি একবার এক বৈঠকে হজরত মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধি (রহ.)-এর কাছ থেকে শুনেছিলাম। এরপর থেকে আমি যতবার এ বিষয়ে চিন্তা করেছি, ততবারই এটিকে যথার্থ ও বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিল পেয়েছি।
সারকথা হলো, আহলে সুন্নতের পথ ও ফিকহে হানাফির সঙ্গে সম্পৃক্ততার পর এগুলো হচ্ছে সেই বিশেষ রঙ বা স্বাতন্ত্রতা যা ‘দেওবন্দিয়াত’ নামে পরিচিত। যে যত বেশি এই রঙে পূর্ণ সে তত বেশি দেওবন্দি। একইভাবে যার মাঝে এই রঙ যত কম সে তত কম দেওবন্দি।
আর সর্বপ্রথম আমি নিজেই স্বীকার ও ঘোষণা করছি যে, আমি নিজের অবস্থান ও আমলের দিক থেকে খুবই দুর্বল মানের একজন দেওবন্দি; কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আমি আসল দেওবন্দিদের দেখেছি এবং তাদের পথ ও চরিত্রে জীবন-যাপন এবং মৃত্যু কামনা করি।