মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৩ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

দ্রুত সমাধান হোক

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় কিছুদিন ধরে বাসাবাড়িতে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) সরবরাহকৃত পানিতে নানা রকমের ময়লা ও পোকার উপস্থিতির পাশাপাশি এসব এলাকার পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও ব্যবহারে অযোগ্য বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি নিঃসন্দেহে ভয়ানক সংকট।
সংবাদপত্রে ‘ঢাকার পানিতে পোকা ময়লা দুর্গন্ধ, দায় নিচ্ছে না ওয়াসা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সংকটে থাকা এলাকাগুলোর পানি সংকট নিয়ে বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, খিলগাঁও, বনশ্রী, কল্যাণপুর, শেওড়াপাড়া, মহাখালী, বাড্ডা, বাংলা মোটর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নিয়ে নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার মানুষ জানিয়েছেন পানি নিয়ে তাদের সীমাহীন ভোগান্তির কথা। তাদের ভাষ্যে, ট্যাপের পানিতে ছোট ছোট পোকা আর ময়লা। পানির রং পাল্টেছে, রয়েছে দুর্গন্ধ। কোনোরকম ধোয়ামোছা, রান্না ও গোসলের কাজ সারতে পারলেও তা খাওয়ার অযোগ্য। কিছু এলাকায় পানিতে পাওয়া যাচ্ছে লাল কেঁচো ও সাদা লার্ভার মতো পোকা। একাধিকবার বাসার ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পানি কিনে খেতে হচ্ছে তাদের। এসব এলাকার বাসিন্দারা এখন চরম পানি সংকটে ভুগছেন। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, পেটের পীড়াসহ চর্মরোগের মতো রোগ। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অবশ্য অভিযোগ করেছেন, এসব ব্যাপারে ওয়াসাকে জানানোর পরও নেওয়া হয়নি যথাযথ ব্যবস্থা। হয়নি সমস্যার সমাধান। পানিসংকট নিয়েই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, পানির এ সংকটে ওয়াসার দায় নেই। কেননা তারা বেশ কিছু বাসাবাড়িতে যাওয়া পানির পাইপ থেকে পানি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন কিছু পাননি। তারা বলছেন, পানিতে সমস্যা বাসাবাড়িগুলোর নিজস্ব সংরক্ষণব্যবস্থায় বা ট্যাঙ্ক ও পাইপলাইনে থাকতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইপলাইনে পোকা পাওয়া মানে লাইনের কোথাও ফাটল বা রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি আছে। এ পানি ব্যবহার করলে ত্বকে সংক্রমণ, পেটের অসুখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এ পানি খেলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, খাদ্য বিষক্রিয়া, চর্মরোগসহ নানা সমস্যায় ভুগতে পারে। এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় বেড়ে গেছে ডায়রিয়া রোগী।
আমরা জানি, ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ঢাকাবাসীর অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় মানুষের ভোগান্তি ও দুর্দশা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মূলত বিগত সময়ে সংস্থাটিতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতার পাশাপাশি আন্তরিকতা ও জবাদিহির অভাব ছিল তীব্র। সব মিলিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকাবাসীর একমাত্র পানির উৎসের দায়িত্বে থাকা ওয়াসা একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি।
আমরা মনে করি, ওয়াসার পানির বিরাজমান এ সংকটের ক্ষেত্রে সংস্থাটি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। সংকটটি মহামারি আকার ধারণ করার আগেই যে কোনো উপায়ে দ্রুত এর সমাধান জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ওয়াসার লাইনগুলোয় কোথায় কোথায় লিকেজ রয়েছে, তা মেরামতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ থাকলে সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেননা এসব কারণে ওয়াসার পানিতে ময়লা ও পোকাযুক্ত হয়। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরের মতো জায়গায় ব্যবহার উপযোগী পানির একমাত্র উৎস ওয়াসার পানি। এ পানির যদি এমন হাল হয়, তাহলে বাঁচা দায় হয়ে যাবে-এটা সন্দেহাতীত। এরই মধ্যে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে নানান পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটেছে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে তৎপর হবেন।