ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া ও ইসলামাবাদ গ্রামজুড়ে বইছে নদীভাঙনের দীর্ঘশ্বাস। বিশখালি নদীর করাল গ্রাসে গত ৫০ বছর ধরে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি ও বাপ-দাদার কবরস্থান। সময়ের পরিক্রমায় একাধিকবার ঠিকানা বদল করেও শেষরক্ষা হয়নি অনেক পরিবারের। ভাঙনের তীব্রতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কান্না থামছেনা বিশখালী নদী পাড়ের মানুষের।
গত ১৫ দিনে নদীর পাড়ে নির্মিত বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এ সময়ে বহু কৃষিজমি চলে গেছে নদীগর্ভে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। ভাঙন ঠেকাতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় গোটা গ্রাম এখন নদীতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মজিদ সিকদার (৬২) বলেন, “৫০ বছর আগে বাবার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। তারপর দূরে গিয়ে বাড়ি করেছি, সেটাও হারিয়েছি। আরও পিছনে গিয়ে কোনোমতে একটা ঘর করেছি, সেটাও এখন ভাঙনের মুখে।”
আঃ হক সিকদার (৭৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “ছোটবেলা থেকে নদীভাঙন দেখছি। এই পাড় ভাঙে, ওই পাড়ে চর পড়ে। এভাবে হারাতে হারাতে এখন নিঃস্ব। কবরস্থানও নেই। এবার হয়তো নিজের কবর দেবার মতো জায়গাটুকুও থাকবেনা। ছোট থেকে চোখের সামনে শত শত একর জমি গেছে নদীতে বিলীন হয়ে।
গৃহবধূ শিল্পী বেগম বলেন, “আমাদের সব ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। এখন যা একটু আছে, সেটাও প্রতিদিন ভাঙছে। কতদিন থাকবে জানি না।”
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ভুক্তভোগী মাফুজা বেগম বলেন, “আমার স্বামীর ভিটায় এখন বসতঘরে বড় ফাটল ধরেছে। রাত হলে ঘুম হয় না, মনে হয় ঘরবাড়ি নিয়ে যে কোনো সময় নদীতে ভেসে যাবো। বাপ-দাদার কবরস্থানও নেই। ৯ জন সদস্যের পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। “সরকার যদি দ্রুত মোগো লইগ্যা কিছু না হরে কোনসময় জানি নিঃস্ব করে বিশখালীর ভাঙ্গন।”
এ এলাকার আরেক বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী রাসেল সিকদার জানান, “রাইতে যে ঘুমাই, ঘুম কি আয়? কোন সময় জানি নদীতে হারিয়ে যাই। বেড়িবাঁধ চলে গেছে। গত ১৫ দিন ধরে ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছর বছর বরাদ্দ এলেও তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় না। অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দায়সারা কাজ হয়, যা বর্ষার চাপে টিকে থাকতে পারে না। ফলে প্রতিবছরই নতুন করে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয় মানুষগুলোকে।
ভুক্তভোগীরা দ্রুত টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা মনে করেন এবার যদি কিছু না হয়, তাহলে হয়তো এ গ্রামকেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না মানচিত্রে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, আমাদের টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আমরা দ্রুতই সরকারের কাছে চাহিদা পাঠাবো, যতদ্রুত সম্ভব বাঁধটি পুনরায় নির্মান করে মানুষের কস্ট লাঘব করার সর্বোচ্চ চেস্টা করবো।