সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচন কমিশনকে মেরুদন্ড সোজা রাখতে হবে

নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক সংস্থা। এই কমিশনের ওপর খবরদারি করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। অতীতে আমরা দেখেছি, কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকার ও প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দল ও ব্যক্তিস্বার্থ আদায় করেছে। সেসব কমিশন ছিল এক কথায় মেরুদ-হীন। আমরা আশা করতে চাই, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নতুন বাংলাদেশে দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠাবোধ করবে না। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কার্যকর থাকলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব নয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নড়েচড়ে বসেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে ধরে নিয়ে কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএসএম নাসির উদ্দিন কমিশনকে প্রো-অ্যাক্টিভ ও দলনিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি আরও বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ও বিদেশে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন করার যে অঙ্গীকার করেছেন, সেটা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব।
বস্তুত আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং এখন থেকেই কার্যক্রম শুরু না করলে সময় পাওয়া যাবে না। এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এখনো হয়নি। ওদিকে সীমানা নির্ধারণের কাজটি জটিল বটে এবং সময়সাপেক্ষও। এছাড়া নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিধিবিধান সংস্কারের যে কথা বলছে, সেসব বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
রোববারের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি সংশোধনী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ও নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে সংবাদপত্র-গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা সংশোধনী ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এসব বিধি ও নীতিমালা সংশোধনীর বিষয়ে মতামত চাইবে কমিশন। এছাড়া নির্বাচনের প্রধান আইনি নির্দেশনা আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধে নির্বাচন কমিশন ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের উদ্দেশে যা বলেছেন, তা ভোটারদের মনে আশাবাদ জাগিয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা কারও নির্দেশনায় কাজ করি না। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো বিশেষ দলের স্বার্থরক্ষায় কাজ না করার ব্যাপারে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, অতীতে যা হয়েছে, কেউ যদি মনে করেন, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন, তাহলে সেটা হবে দিবাস্বপ্ন।
আগামী নির্বাচন এ জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সেই নির্বাচনকে যথাসম্ভব সুষ্ঠু করার লক্ষ্য সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই তৎপর হতে হবে। কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে, যাতে সময়মতোই নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করে নির্ধারিত দিনে নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়। নির্বাচন কমিশনের কাজের গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই কমিশনের প্রতি সহায়তার হাত বাড়াতে হবে।