খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিপরীতে বরাদ্দের ১০ শতাংশ, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ’র বিরুদ্ধে ৫ শতাংশ, নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ানের বিরুদ্ধে ৫ শতাংশ ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আশীষ চাকমার বিরুদ্ধে ২ শতাংশ পার্সোনাল কমিশন বা ঘুস দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। দাবি করা ঘুস প্রদান না করলে নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
খাগড়াছড়ির মাস্টারদা সূর্য সেন গণপাঠাগারের সাধারণ সদস্য মো. আরাফাত হোসেন রিজভী দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক আবেদনে এই অভিযোগ করেছেন। অপর দিকে অসদাচারন ও দূর্নীতি অভিযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে ইতিমধ্যে পরিষদের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে ৭ জুলাই নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক আবেদনে মো. আরাফাত হোসেন রিজভী উল্লেখ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মাস্টারদা সূর্য সেন গণপাঠাগার কেন্দ্রের উদ্যোগে গ্রুপ ভিত্তিক বই পড়া কর্মসূচি পালন, ১৫৫ নং প্রকল্পে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের উন্নয়ন স্কিম প্রণয়ন (ডিএসপি) প্রস্তুতের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের কাগজ নিয়ে জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ানের কাছে গেলে তিনি সাফ , ‘টাকা ছাড়া কোনো কাজ হবে না” বলে জানিয়ে দেন। এরপর থেকেই ধাপে ধাপে শুরু হয় হয়রানি।
প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে বরাদ্দের বিপরীতে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা ১০ শতাংশ, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ ৫ শতাংশ, নির্বাহী প্রকৗশলী প্রতিপদ দেওয়ান ৫ শতাংশ, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে নিয়োজিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আশীষ চাকমা ২ শতাংশ কমিশন দাবি করেন। দাবি করা ঘুস প্রদানে অস্বীকৃতি করায় নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাজেট ৩০ লাখ টাকার মধ্যে অগ্রিম ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা অর্থ ছাড়ের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক গত ১৩ মে শেফালিকা ত্রিপুরা আবেদন করেন। কিন্তু প্রকল্পে ঘুস না পাওয়ার কারণে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা উত্তেজিত হয়ে গত ২ জুন সহকারী প্রকৌশলী অপু বড়ুয়ার শার্টের কলার ধরে তাকে অপমান করেন।তারপর মিসেস শেফালিকা ত্রিপুরাকে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন। এরপরও নানা রকম হয়রানি অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর করা আবেদনপত্রে।
খাগড়াছড়ির মাস্টারদা সূর্য সেন গণপাঠাগারের সাধারণ সদস্য মো. আরাফাত হোসেন রিজভী বলেন, ‘আমার অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমাণসহ দুদক চেয়ারম্যানের কাছে গত ৬ জুলাই ডাকযোগে পাঠিয়েছি।
অপর দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শেফালিকা ত্রিপুরা জানান, ‘ নির্বাহী কর্মকর্তা বা অন্যান্য কর্মকর্তার ঘুষ দাবীর বিষয়টি আমি জানি না। তবে চেয়ারম্যান ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার চেক দিতে তিনি এক লাখ টাকা নিয়েছেন। এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এমনি এমনি টাকা আসে না, সেখানেও টাকা দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয়।’
অভিযোগের খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, ‘ আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে যদি কোন তথ্য-প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হবে, আমি মাথা পেতে নেব।’
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আশীষ চাকমা উৎকোচ দাবীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যা শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরু না ত্রিপুরা বলেন, অভিযোগ ভুয়া ও মাস্টারদা সূর্য সেন গণপাঠাগারের প্রকল্পটিও ভুয়া।
উল্লেখ্য, অসদাচারন ও দূর্নীতি অভিযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে পরিষদের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে ৭ জুলাই নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জিরুনা ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান এবং আরও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর তিনদন পর ১০ নভেম্বর নব নিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
শুরু থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে।
অপর দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে পরিষদের ১৪ জন সদস্য কর্তৃক সদস্যদের অবমূল্যায়ন, খারাপ আচরণ, হস্তান্তরিত বিভাগের বিভাগের প্রধান ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতিসহ শিক্ষক বদলি বানিজ্য, ঠিকাদার বিলের ফাইল আটকিয়ে রেখে ঘুষ বানিজ্য ও চরম দূর্নীতির অভিযোগ দাখিল করে।