মুহাম্মাদ শোয়াইব
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে সামরিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারতের সাম্প্রতিক বিমান হামলা এবং পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারির ফলে উপমহাদেশ আবারও একটি বিপজ্জনক সংঘাতের কিনারায় দাঁড়িয়ে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা নজর রাখছেন ইসলামাবাদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে পাকিস্তান জবাব দেবে। এখন প্রশ্ন, সেই জবাব কেমন হবে? শান্তিপূর্ণ এবং কৌশলগতভাবে পরিমিত, না কি প্রতিশোধপরায়ণ ও আগ্রাসী?
এই প্রসঙ্গে দুটি শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ উল্লেখযোগ্য।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস (Carnegie Endowment for International Peace)
সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মিলান ভাইশ্যনাভ (Milan Vaishnav) মনে করেন, ইসলামাবাদ চাইলে এ মুহূর্তে “বিজয়ের দাবি” করতে পারে—বিশেষ করে তাদের দাবিকৃত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর ঘটনা তুলে ধরেই। ভাইশ্যনাভ বলেন:
“যদি এই বিমানগুলো সত্যিই গুলি করে নামানো হয়ে থাকে—even under murky circumstances—তাহলে পাকিস্তান নিজেদের জয়ী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। এতে তারা একদিকে জনগণের মানসিকতা সামলে নিতে পারবে, আবার আরেকদিকে বড় ধরণের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে।”
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন (Brookings Institution)
বিশিষ্ট বিশ্লেষক তানভি মাধান (Tanvi Madan), যিনি ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফরেন পলিসি প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো, সতর্ক করেছেন যে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া যদি “সমুচিতভাবে” সীমিত না হয়, তাহলে ভারত পাল্টা জবাবে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির আগের সেনাপ্রধান কামার বাজওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কঠোর এবং সক্রিয়। অতএব, যদি প্রতিশোধের পথ বেছে নেওয়া হয়, সেটি হয়তো আরও উচ্চমাত্রার হবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যখন বলেন যে, তারা কেবল ভারতীয় সামরিক স্থাপনাগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করবে এবং বেসামরিকদের ছাড় দেবে, তখন তা এক ধরনের কৌশলগত সংযমের বার্তা দেয়। তবে এই বার্তার পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতির বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না।
বিশ্লেষকদের মতে, উভয় পক্ষই এখনো পর্যন্ত “যুক্তিসংগত রেশনাল অ্যাক্টর” হিসেবে আচরণ করছে। অর্থাৎ, তারা একে অপরকে চাপে রাখলেও, যুদ্ধ এড়ানোর একটি অপার সম্ভাবনা খোলা রেখেছে।
পাকিস্তানের সামনে এখন ইতিহাসের একটি সংকটময় মুহূর্ত। তারা চাইলে এই উত্তেজনার আগুনে ঘি না ঢেলে, কৌশলী কূটনৈতিকতা এবং বিবেচনার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েরই সামনে হারানোর অনেক কিছু রয়েছে—জীবন, সম্পদ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান। সুতরাং এখন সবচেয়ে প্রয়োজন দায়িত্বশীল নেতৃত্ব এবং বাস্তবতাভিত্তিক সিদ্ধান্ত।