পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের অংশ হিসেবে তাদের ইউনিফর্ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে নতুন ইউনিফর্ম তৈরি হয়েছে এবং তা পুলিশ সদস্যদের হাতে পৌঁছাতে শুরু করেছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যরা নতুন পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের দেখা যাচ্ছে।
পুলিশের এই নতুন পোশাক নিয়ে বাহিনীর ভেতরে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক সাধারণ মানুষ মনে করছেন, নতুন পোশাকটি ভালো হয়নি। আবার কেউ কেউ বলছেন, নতুন পোশাকের সঙ্গে মানসিকতার পরিবর্তনও আসবে এবং পুলিশ প্রকৃত অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে উঠবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠার পর থেকে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার ও পোশাক পরিবর্তনের দাবি উঠলে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন ইউনিফর্ম অনুমোদন করে। আয়রন কালারের (লৌহ রঙের) এই পোশাক সব ইউনিটের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে—পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সবাই একই পোশাক পরবে।
রাজধানীর পল্টন এলাকায় নতুন পোশাক দেখে মোটরসাইকেলযাত্রী মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “পুলিশের নতুন পোশাকটি আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আগের পোশাক দেখলে ভয় লাগত। এখন পোশাক দেখলে আস্থা জাগছে পুলিশের প্রতি। আশা করছি, নতুন পোশাকের নতুন পুলিশ নতুন বাংলাদেশে জনগণের বন্ধুর মতো হবে।”
পোশাক নিয়ে পুলিশের ভেতরেও আলোচনা চলছে। অনেক সদস্য নতুন রঙ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। মহানগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের নতুন পোশাক ভালো লাগেনি। আবার অনেকেই নতুন পোশাককে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন।
একজন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, “এখন সব ইউনিটের ইউনিফর্ম একই রঙের হবে। আগে মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের পোশাকে পার্থক্য ছিল, বোঝা যেত। এখন আর বোঝা যাবে না, এটা সমস্যা হতে পারে।”
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ইউনিফর্ম বা রঙ পরিবর্তন আসল বিষয় নয়। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে যে বিরূপ ধারণা রয়েছে, সেটি পরিবর্তন করতে হবে। পুলিশকে জনবান্ধব করতে হবে।”
অন্যদিকে উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, “নতুন পোশাক ভালো হয়েছে। আগের ইউনিফর্ম দেখলে মানুষ আমাদের ভিন্ন চোখে দেখত। নতুন পোশাক পরে আমরা নতুন উদ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়াবো।”
বিশ্বজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক দেশ-কালের সঙ্গে মানিয়ে নির্ধারণ করা হয়। শীতপ্রধান দেশে কালো পোশাক প্রচলিত, আর গরম বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে হালকা রঙের পোশাক ব্যবহৃত হয়। ভারতসহ এ অঞ্চলে খাকি পোশাকের প্রচলন ঔপনিবেশিক ইতিহাসের কারণে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন পোশাকের কাপড় দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কি না তা পরীক্ষা করা হয়েছে। কাপড়ের মান যাচাই করা হয়েছে এবং ব্যাজের রঙও নতুন ইউনিফর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, এখনো সব সদস্যের হাতে নতুন পোশাক পৌঁছায়নি। একদিন আগে থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে। যারা পেয়েছেন তারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, জেলা ও রেঞ্জ পুলিশও পর্যায়ক্রমে নতুন পোশাক পরবে। তবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) আগের পোশাকেই থাকবে।