নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদে ১০০ আসন বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং এর সদস্যরা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) মনোনীত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব।
একইসঙ্গে, ‘প্রোপার ক্ষমতা না দিলে উচ্চকক্ষ বানিয়ে লাভ নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা গালিব বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জাতীয় সংসদে একটা ১০০ আসন বিশিষ্ট উচ্চকক্ষ হবে। উচ্চকক্ষের সদস্যরা মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলো যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন করা হবে’।
এটা খুবই ভালো অগ্রগতি উল্লেখ করে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘উচ্চকক্ষে পিআর কেনো প্রয়োজন এটা নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি দেশে থাকতে। এখন টিভি আর যমুনা টিভির দুইটা টকশোতে খুব প্রিসাইজ আলাপ ছিল এটা নিয়ে।’
তার মতে, ‘তবে উচ্চকক্ষের হাতে কি কি ক্ষমতা থাকবে সেই আলাপটাও গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান সংশোধন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ উচ্চকক্ষের হাতে থাকা উচিত।উচ্চকক্ষের হাতে প্রপার ক্ষমতা না দিলে তো উচ্চকক্ষ বানিয়ে কোনো লাভ নেই’।
তিনি আরও বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনকে অনুরোধ করব উচ্চকক্ষের হাতে কি কি ক্ষমতা থাকবে সেই আলাপটা সিরিয়াসলি তুলতে’।
এদিকে, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ১৯টি বিষয়ে একমত হয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার শেষদিনের আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, এ নিয়ে ২৩দিন ধরে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে আলোচনা করেছি। এর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে দলগত ও জোটগতভাবে আলোচনা করেছিলাম। সেখানে কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্বেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলো বাদ দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, এই ১৯টি বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে।
১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সংক্রান্ত বিধান, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিশেষত উচ্চকক্ষ গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেক্টোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে বিএনপি উচ্চআদালতের সঙ্গে আলোচনা যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রশ্নে বিএনপিসহ কয়েকটি দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে।