নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ফল মেলার শেষ দিনে আয়োজক ও দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা ছাপিয়ে সৃষ্টি হয় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনে খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী এই মেলা শনিবার সন্ধ্যায় শেষ হওয়ার পরপরই রূপ নেয় বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতিতে। একাংশ দর্শনার্থীর হঠাৎ লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারি ও বেসরকারি একাধিক স্টল। বিশেষ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বৃহৎ প্রদর্শনী স্টলে সাজানো ছিল বহু প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফল। মেলা শেষে এই ফলগুলো এতিমখানায় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, শনিবার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটার দিকে। তবে ততক্ষণে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো রীতিমতো উপচে পড়া। এই সুযোগেই মঞ্চ ও ডিসপ্লে স্টলের সামনের ফলের দিকে হঠাৎই হাত বাড়ান কিছু লোক। প্রথমে কিছুজন, পরে আরও অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফল সংগ্রহে অংশ নেন।
লুটপাটের সময় কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দর্শনার্থীরা তা একপ্রকার অগ্রাহ্যই করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গবেষণা ও প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে এসব দুর্লভ ফল সাজানো হয়েছিল। অথচ মুহূর্তেই সব নিয়ে যাওয়া হলো। কারও কোনো বাধা শুনল না কেউ।”
অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মী জানান, শেষ সময়ে মেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বিপরীতে, দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তখনও ছিলো ব্যাপক। “এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই কিছু লোক লুটপাটে নামে,” বলেন তিনি।
ঘটনার একাধিক ভিডিও ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক মানুষ একসাথে স্টলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেউ ডাব, কেউ আনারস, কেউ আম কিংবা ড্রাগন ফল সংগ্রহ করছেন। এমনকি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনের শাপলা ফুল আকৃতির ডিসপ্লে থেকেও ফল সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই।
ঘটনাটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ একে ‘চরম লজ্জাজনক ও আত্মবিধ্বংসী আচরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এক ব্যবহারকারীর মন্তব্য, “মেলায় যাওয়া মানেই উপহার নিয়ে ফেরা—এই মানসিকতা আমাদের সামাজিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে।”
গত ১৯ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই জাতীয় ফল মেলা। দেশি ফলের প্রচার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণকে ফলচাষে উৎসাহিত করাই ছিল মেলার মূল উদ্দেশ্য। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের মেলায় দেশীয় আম, কাঁঠাল, লিচু থেকে শুরু করে বিদেশি ড্রাগন ফল, প্যাশন ফ্রুটসহ নানা দুর্লভ ফল প্রদর্শিত হয়।
তবে শেষ দিনের এমন বিশৃঙ্খলা আয়োজনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারি জনমুখী আয়োজনের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে নতুনভাবে।