আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং নতুন ঝড়ের আশঙ্কার মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এবিসি নিউজ।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল জানিয়েছে, শুক্রবার ট্রপিক্যাল স্টর্ম ‘উইফা’ দেশের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার পর আরও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে রাতভর বৃষ্টিতে মারিকিনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার পর ম্যানিলার অনেক এলাকায় পায়ের পাঁজর পর্যন্ত পানি জমে যায়। নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে রাতেই ২৩ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে স্কুল, কমিউনিটি হল ও ঢেকে রাখা আঙিনায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর কেজন, পাসিগ, কালোকানসহ প্রধান সরকারি এলাকা থেকেও প্রায় ৪৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
‘সাধারণত এরা খাল-বিলের ধারে নিচু এলাকায় থাকে,’ জানিয়েছেন মারিকিনা রেসকিউ অফিসের উইলমার তান। তিনি জানান, নদীর উচ্চতা ১৮ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
কালোকানে বৃষ্টির পানিতে ফুলে ওঠা খাল পার হওয়ার সময় এক বৃদ্ধা ও তার চালক ভেসে যান বলে জানান জরুরি বিভাগের কর্মী জন পল নিয়েটস। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল তারা গাড়ি থেকে বের হতে পেরেছিলেন। কিন্তু কালোকানের মেয়র ডেল গনজালো মালাপিতান জানিয়েছেন, চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
‘আমরা চালকের মরদেহ পেয়েছি,’ তিনি ম্যানিলার একটি রেডিওতে বলেন। ‘যেখান থেকে গাড়ি ভেসে গিয়েছিল, সেখান থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে মরদেহ পাওয়া গেছে… তারা বের হতে পারেননি।’
ভিয়েতনামে আঘাত হানার পর উইফা দুর্বল হলেও ভূমিধস এবং নতুন করে বন্যার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ম্যানিলায় পানি নামতে শুরু করলেও দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব উপকূলের কাছে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ একটি ট্রপিক্যাল ডিপ্রেশনে রূপ নিয়েছে। এটি ফিলিপাইনে আঘাত হানবে না বলে আশা করা হলেও সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে হাজার হাজার মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেননি। রাজধানীর কাছে ছোট শহর কাইন্টায় এএফপির সাংবাদিকরা দেখেছেন, বাসিন্দারা ফোমের বাক্স ও পুরনো ফ্রিজ ভেলায় রূপান্তর করে পানি পার হচ্ছেন।
অ্যাঞ্জেলো ডেলা ক্রুজ জানিয়েছেন, ঘন ঘন বন্যার কথা মাথায় রেখে কেনা একটি রাবারের নৌকা ব্যবহার করে তিনি তার চাচির ছোট হোটেলের জন্য চাল পরিবহন করছেন।
‘ভ্যানে না নিয়ে আমাদের নৌকায় করে চাল নিতে হচ্ছে, নৌকা ঠেলে ঠেলে হাঁটতে হচ্ছে যাতে চাল ভিজে না যায়,’ তিনি বলেন।
প্রতি বছর অন্তত ২০টি ঝড় বা টাইফুন ফিলিপাইন আঘাত করে বা কাছ দিয়ে চলে যায়, এবং সাধারণত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র অঞ্চলগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব উষ্ণ হয়ে ওঠায় এসব প্রাণঘাতী ও বিধ্বংসী ঝড় আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
‘এটি কঠিন, কারণ বৃষ্টি যদি চলতেই থাকে… নদীর পানি আরও বেড়ে যাবে,’ ম্যানিলার এক রাস্তা ঝাড়ুদার অ্যাভেলিনা লুমাংতাদ বলেন, ‘বন্যা খুবই বিপজ্জনক।