রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৫ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বিনিয়োগের প্রলোভন : লাখ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে নাইজেরিয়ান একটি চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে দেশি ও নাইজেরিয়ানসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

রোববার রাতে ও সোমবার দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে ২ জন নাইজেরিয়ান নাগরিক ও একজন বাংলাদেশি নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১।

গ্রেপ্তার নাইজেরিয়ান নাগরিকরা হলেন- ফ্রাঙ্ক কোকো ও ইমানুয়েল। এছাড়া গ্রেপ্তার বাংলাদেশি নারীর নাম সুইটি আক্তার।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ, ৪টি আইফোন, ৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১টি ট্যাব, ১টি ওরিকো ব্র্যান্ডের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

সোমবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম।

মোহাম্মদ জাহিদুল করিম বলেন, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যাবহার করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র থেকে মধ্যম মানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি চক্র বিভিন্ন দফায় অর্থ আত্মসাৎ করছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি সুকৌশলে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে। বিশ্বাস অর্জন করলেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এ ধরনের প্রতারণা বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং চক্রটি তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে যথেষ্ট দক্ষ। প্রতারণার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ অথবা টেলিগ্রাম ব্যবহার করে অথবা ভুয়া অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর সংযুক্ত করে।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে চক্রটিতে কিছু নাইজেরিয়ান নাগরিক জড়িত যারা বাংলাদেশি মেয়েদের মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বরে সরাসরি ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে এবং মিডিয়ায় নিয়োজিত নারীদের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গেই হাতিয়ে নেয় লক্ষাধিক টাকা।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রে তারা মূলত একজন বিত্তবান বিদেশি নাগরিকের বেশ ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো অথবা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশ থেকে পাঠানো দামি পণ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নির্ধারিত চার্জ দাবি করে প্রতারণা করে। এক্ষেত্রে তারা ফটোশপ করা বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট বানিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে প্রথম ধাপে সামান্য অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স অথবা বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করা হয় যা অধিকাংশ গ্রাহক প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দেয়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার নাইজেরিয়ান নাগরিক কোকো ও ইমানুয়েল প্রায় ২ বছর এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগী সুইটি আক্তার ৩ মাস ধরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কোকো ২ বছর আগে র‍্যাব-১০ এর হাতে গ্রেপ্তার হয়। চলমান অভিযানে তাদের থেকে ২টি নগদ ও বিকাশ একাউন্টে প্রায় ১৮ লাখ টাকার স্টেটমেন্ট পাওয়া যায়, যেখানে এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো মেসেজের বরাতে টাকা জমা হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারা এর পাশাপাশি আরও মোবাইল ব্যাংকিং সিম এবং একাউন্ট ব্যাবহার করে যা উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান। গ্রেপ্তার নারী সদস্য মূলত বাংলাদেশের লোকাল কোঅরডিনেটর/মিডিয়ার বেশ ধরে বিভিন্ন বাংলাদেশিদের নম্বরে যোগাযোগ করে এবং তাদের প্রলুব্ধ করে অর্থ আত্মসাৎ করে। এক্ষেত্রে তার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বাঙালিরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মিডিয়া হিসেবে অংশগ্রহণকারীরা প্রতারণায় প্রাপ্ত ১০-১৫ শতাংশ টাকার শেয়ার পায়।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক জাহিদুল করিম বলেন, গ্রেপ্তার বিদেশি দুই নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ দীর্ঘদিন আগেই শেষ হয়েছে বলে তারা জানায় এবং ১ জনের পাসপোর্ট আগেই জব্দ করা হয়েছে।

বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ না থাকলে বাড়ি ভাড়া বা সাবলেট না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

বিদেশি নাগরিকদের ভিসা না থাকা ও পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরেও কেন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে র‍্যাব-১ এর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগের মামলাগুলোর নথিপত্র দেখে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ সঠিক আছে কি না যাচাই করে নিতে হবে।

কত জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এ বিষয়ে তিনি বলেন এখন পর্যন্ত শতাধিক নাগরিকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেউ ৫০ হাজার দিয়েছে কেউ এক লাখ দিয়েছে।

চক্রটির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি ন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।