নিজস্ব প্রতিবেদক : জামানতবিহীনভাবে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের দিলকুশা শাখা থেকে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক সুমিত্রা সেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, বেসিক ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিম, বিজয় ভট্টাচার্য, প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নিলুফার আহমেদ ও সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার গোলাম ফারুক খান এবং বেলায়েত নেভিগেশন কোম্পানির মালিক গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু ওরফে জি বি হোসেন ও তার স্ত্রী নাহিদ আক্তার।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অসদাচরণের মাধ্যমে ব্যাংকের আসল বাবদ ১০ কোটি ৭৪ লাখ এবং সুদ বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বেলায়েত নেভিগেশন নামে একটি হিসাব খোলা হয়। একই দিনে ১৫ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ এবং ৮ কোটি টাকার এসওডি ঋণের জন্য আবেদন করেন গাজী বেলায়েত হোসেন, যা গৃহীত হয়। এর মধ্যে কিছু টাকা পরিশোধ হলেও অভিযোগের ওই অর্থ ব্যাংক ফেরত পায়নি। কোনো সহায়ক জামানত না দিয়ে শুধুমাত্র প্রস্তাবিত ৪টি কার্গো ভেসেলকে প্রাথমিক জামানত হিসেবে মর্টগেজ বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসামিরা।
আসামিদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা অনুসারে অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই জামানতবিহীনভাবে ৩০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে আত্মসাতের ঘটনায় আব্দুল হাই বাচ্চু ও এমডি ফখরুল ইসলামসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।
এর আগে ২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসেবে আলোচিত আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০.২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে লুটপাট করা প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা ও সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান ও ভাই এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ৪ মামলা দায়ের করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি।
মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়। চার মামলার মধ্যে তিনটি মামলায়ই বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাকে ছাড়াও আসামি করা হয় তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক, তার মেয়ে শেখ রাফা হাইকে।