বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় বৈদ্যুতিক শক দিয়ে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজুয়ারা সিপু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও নিহতের মেয়ের জামাই ও এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৪০)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে কবির তালুকদার মহিমা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। তবে যৌতুকের দাবিতে কবির প্রায়ই স্ত্রী মহিমাকে নির্যাতন করতেন। এছাড়াও মেয়ে রেখা বেগমকে বিয়ে দেওয়ার পর মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কবির। এর মধ্যে একদিন বাবা ও শাশুড়িকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে প্রতিবাদ করেন মেয়ে রেখা। এ ঘটনার পর শাশুড়ি এলাচী বেগম এবং স্বামী সুজন রেখার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে ক্ষোভে রেখা আত্মহত্যা করেন।
এ ঘটনার চার বছর পর মহিমা বেগমের অমতে কবির তার মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এতে মহিমা বেগমের সঙ্গে বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এরপর কবির, এলাচী ও তার ছেলে সুজন মিলে মহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর সকালে তারা মহিমা বেগমকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করেন এবং ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নিহতের ছেলে হেলাল তালুকদার বিষয়টি বুঝতে পেরে পাথরঘাটা থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে কবির তালুকদার ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচি বেগম ও তার ছেলে সুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত।
মামলার বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, তার মায়ের হত্যার বিচার হওয়ায় তিনি খুশি।
মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রঞ্জুআরা শিপু বলেন, সাক্ষ্য–প্রমাণে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এই রায়ের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।