বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৪ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতীয় সাংবাদিক কারন থাপারকে বিলাওয়াল ভুট্টো : পাকিস্তান কখনো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি ভারতের অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, পাকিস্তান কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দেশের বাইরে হামলার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না।

ভারতের সাংবাদিক কারন থাপারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল বলেন, ‘আপনার উল্লেখ করা কোনো গোষ্ঠীকে বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকে পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের বাইরে তো নয়ই, এমনকি দেশের ভেতরও সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অনুমতি দেয় না।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দীর্ঘ লড়াইয়ের ক্ষতির দিকটি তুলে ধরে পিপিপি নেতা বলেন, ‘বিশ্ব জানে, পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের মূল ক্ষতিগ্রস্ত। পাকিস্তান সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ লড়ছে এবং লড়ে এসেছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৯২ হাজার প্রাণ হারিয়েছি। শুধু গত বছরেই ২০০টির বেশি সন্ত্রাসী হামলায় ১,২০০ এর বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘চলতি বছর যেভাবে হামলা বাড়ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর হবে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ড স্মরণ করে বিলাওয়াল বলেন, ‘আমি নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার। পেহেলগাম হামলার ভুক্তভোগীদের যন্ত্রণা আমি অনুভব করি। তাদের পরিবারের যে মানসিক যন্ত্রণা, তা আমি অনেকের চেয়ে ভালো বুঝি।’

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের পদক্ষেপ :

বিলাওয়াল বলেন, ‘বেনজির ভুট্টো হত্যার পর জারদারির সময়ে পাকিস্তান দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে অভিযান চালিয়েছিল। পরবর্তী সরকার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে।’

ভারতের উদ্বেগের গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের কথাও জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) কঠোর পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো কিছু গোপন রাখা যায় না।’

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত এবং তা সমর্থন করেছে।

ভারতের অভিযোগের জবাব :
পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ প্রকাশ্যে বলেন যে, ‘আমরা যেকোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের অংশ হতে প্রস্তুত, আমাদের হাত পরিষ্কার।’ কিন্তু ভারত সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান বিলাওয়াল।

গত এপ্রিলে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার জেরে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে দুই দেশের মধ্যে চার দিন ধরে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণ চলে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

‘অপারেশন বুনয়ানুম মারসুস’ ও ট্রাম্পের ভূমিকা :
ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন বুনয়ানুম-মারসুস’ নামে পাল্টা অভিযান চালিয়ে ভারতের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। যদিও ভারত ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করে, পাকিস্তান ট্রাম্পের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিয়ে তাকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়।

পাকিস্তানের দাবি, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের কারণে গত মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে।