আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে দুই দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুতর সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
চীনের উদ্বেগ
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, শান্ত থাকার এবং এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানাই যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।’
মার্কিন প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এটা দুঃখজনক, আমরা মাত্র খবরটা পেলাম।’ পরে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি খুব দ্রুতই এর অবসান ঘটবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংকট নিরসনে নেতৃত্ব পর্যায়ে যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের অবস্থান
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে চালানো অভিযানে মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তিনি উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একটি সামরিক সংঘাত সহ্য করতে পারবে না।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় নেতারা
ইইউ-এর পররাষ্ট্র মুখপাত্র আনোয়ার এল আনুনি বলেন, ‘আমরা উভয় দেশকে সংযম দেখাতে ও উত্তেজনা প্রশমনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিরোধের একটি আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত, চিরস্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন।’
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের আত্মরক্ষার ইচ্ছাকে আমরা বুঝি, তবে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার এবং সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার আহ্বান জানাই।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুই পরমাণু শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এখন যুক্তি ও বিচক্ষণতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার পার্লামেন্টে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যুক্তরাজ্যের বহু নাগরিকের জন্য উদ্বেগজনক। আমরা দুই দেশের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে জরুরি যোগাযোগ রাখছি, শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমন নিশ্চিত করতে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা সামরিক সংঘর্ষের এই তীব্রতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং উভয় পক্ষকে সংযত থাকতে ও পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে আহ্বান জানাই। আমরা আশা করি এই বিরোধ শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান হবে।’
তুরস্ক ও আফগানিস্তানের প্রতিক্রিয়া
ভারতের রাতের হামলার পর তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই হামলা একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করেছে। আমরা এই উসকানিমূলক পদক্ষেপ ও বেসামরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার নিন্দা জানাই।’
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে উত্তেজনা বৃদ্ধি ‘এই অঞ্চলের জন্য উপকারী নয়।’
কাবুল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানাই।’