মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে; আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানা আজ সকালের ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় ধসে পড়া দেয়াল, রেলিং ও আতঙ্কজনিত ঘটনাই এসব মৃত্যুর কারণ বলে স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৬০৬ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ১৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেওয়া অনেক রোগীর তথ্য এখনো হালনাগাদ না হওয়ায় আহতের প্রকৃত সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ঢাকায় চারজনের মৃত্যু

পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকায় একটি পুরোনো ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন— রাফিউল ইসলাম (২০), আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে। আব্দুর রহিম লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনা গ্রামের বাসিন্দা; তিনি পরিবারের সঙ্গে সুরিটোলা এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

এ ছাড়া মুগদার মদিনাবাগে একটি নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে মাকসুদ (৫০) নামের নিরাপত্তাকর্মী গুরুতর আহত হন। বেলা ১১টার দিকে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনার পর তাঁকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নারায়ণগঞ্জে শিশুর মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি দেয়াল ধসে পড়ে ১০ মাস বয়সী শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায় বলে পরিবার জানিয়েছে।

নরসিংদীতে পাঁচজনের প্রাণহানি

নরসিংদীর সদর উপজেলার গাবতলী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল থেকে ইট পড়ে পাশের বাড়ির ছাদের অংশ ভেঙে পড়ে। এতে ওমর (৮), তাঁর বাবা দেলোয়ার হোসেন ও দুই বোন আহত হন। প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ওমরকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়; সেখানে পৌঁছানোর পর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে দেলোয়ার হোসেনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) মাটির ঘরের দেয়ালধসে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে নরসিংদীর ১০০ শয্যার হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

শিবপুর উপজেলার আজকীতলা এলাকায় ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে আহত হন ফোরকান মিয়া (৪৫)। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে শিবপুর মডেল থানার ওসি জানিয়েছেন।

এ ছাড়া নরসিংদীর ডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন।

ভূমিকম্পের উৎস ও মাত্রা

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকা। সংস্থাটি একে ‘মাঝারি মাত্রার’ ভূমিকম্প হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আহতদের চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।