রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

মাছের পোনা চাষ করেই ভাগ্য বদল মতিনের, মাসে আয় এক লাখ টাকা

পাবনা প্রতিনিধি : বড় মাছ নয়, শুধু পোনা মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পাবনার আব্দুল মতিন। পোনা মাছ বিক্রি করে তার মাসে আয় এক লাখ টাকা। বলা যায় মাছ চাষ করেই শুণ্য থেকে লাখপতি হয়েছেন মতিন। কিছুই না থাকার সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তাদের মতো পাবনায় বেকার দরিদ্র ব্যক্তিদের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রশিক্ষণে দিয়ে স্বাবলম্বী করতে কাজ করেছে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আব্দুল মতিন। এক সময় গ্রামের একটি ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেই আয়ে সংসার না চলায় দুশ্চিন্তায় পড়েন। কি করবে ভেবে না পেয়ে এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন মাছ চাষের। তখন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিকেএসফের আর্থিক সহযোগিতা ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কারিগরী সহযোগিতায় মাত্র ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ।

এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এক বছরেই তার লাভ হয় ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে তার ৫টি পুকুরে ধানি থেকে পোনা মাছের চাষ চলছে। তার খামারে সুবর্ণ জাতের রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার ও গ্লাসকাপ জাতের মাছের পোনা চাষ করা হয়।

আলাপকালে আব্দুল মতিন বলেন, পোনা মাছের পাশাপাশি তিনি বড় মাছেরও চাষ করি। বিশেষ করে সুবর্ণ জাতের রুই মাছের পোনা বিক্রি করে সবার কাছে আলাদা পরিচিতি পেয়েছি। এই মাছ দ্রুত বড় হয়, আবার চাষ করে লাভও বেশি। এক বছরে আমার খরচ বাদ দিয়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় হয়। তিন বছরে পোনা মাছ চাষ করে আমার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। স্বাবলম্বী হয়েছি।

মতিনের খামারে উৎপাদিত পোনা মাছ নাটোর, রাজশাহী, যশোর, মাগুরা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসেন এখানে পোনা কিনতে। তার দেখাদেখি অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

আটঘরিয়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, মতিনের কিছুই ছিল না। শুধু পোনা মাছ বিক্রি করে তিন বছরে এত দ্রুত উন্নতি করবে ভাবতে পারিনি। তাকে দেখে আমি নিজেও পোনা মাছ চাষ শুরু করেছি। আশা করছি ভাল লাভ করতে পারবো।

নাটোর থেকে পোনা মাছ কিনতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মতিন ভাইয়ের কথা অনেক শুনেছি। বিশেষ করে সুবর্ণ রুই মাছের পোনা নাকি খুব ভাল। অল্পদিনে লাভজনক। তাই আসছি পোনা নিতে। ভাবছি আমিও পোনা মাছ চাষ শুরু করবো।

জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, পাবনা শাখার মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আব্দুল মতিনকে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মাছ চাষে উদ্বূদ্ধ করা হয়। তাকে কারিগরি সব ধরনের সহায়তা ও প্রশক্ষিণ দেওয়া হয়েছে। তার মতো পাবনার ৩টি উপজেলায় ১২১ জন কৃষককে মৎস্য চাষে স্বাবলম্বী করেছে আমাদের সংস্থাটি।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরাবরই পাবনা মৎস্য চাষে উদ্বৃত্ত একটি জেলা। জেলা উন্নতজাতের মাছ চাষ হয়ে তাকে। বিভিন্ন উপজেলায় উন্নতজাতের মাছের চাষ সম্প্রসারণ করছি। অনেকে সরকারি বেসরকারি সহায়তা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা এবং পরামর্শের মাধ্যমে মৎস্য চাষীদের পাশে আছি।

তিনি জানান, গত বছর এ জেলায় ৭৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৭৪ হাজার মেট্রিকটন।