মুক্তবাণী ডেস্ক: বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীদের পাশাপাশি জুলাই-অগাস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির সময় বারবার অভিযোগ করেছিল যে, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের “মাস্টারমাইন্ড”—অর্থাৎ পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আরও দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন ছিলেন মামলার একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি। তিনি পরে অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় প্রথম মামলা (বিবিধ মামলা) হয়।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সে সময় তিনি মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে এ বছরের মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপিকে আসামি করার আবেদন প্রসিকিউশন করলে তা মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সময়কাল ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগ হলো:
এই মামলায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, আহত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী এবং চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও-ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং জব্দ করা গুলি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ১২ অক্টোবর যুক্তি-তর্ক শুরু হয় এবং শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। ওইদিনই চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।