বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১২ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

মুরাদনগরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ; হাসপাতালে মূল আসামী, বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ এবং ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (২৯ জুন) ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাহেরচর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে। এর আগে, শনিবার (২৮ জুন) রাতভর অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন—একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে আরিফ এবং তালেম হোসেনের ছেলে অনিক।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলার তদন্তে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে অভিযুক্ত ফজর আলী ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে।

ভুক্তভোগী নারী (২৫) একজন প্রবাসীর স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী পাঁচ বছর ধরে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ঘটনার পরদিন শুক্রবার (২৭ জুন) তিনি মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের সময় আশপাশের কয়েকজন যুবক ওই নারীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে এবং ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ওই ভিডিওটি ৫১ সেকেন্ড দীর্ঘ এবং তাতে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক মিলে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে মারধর করছে এবং তিনি বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় এবং এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

রোববার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) রাশেদুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হন প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী। পরে আহতাবস্থায় তিনি পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন।

পুলিশ তাকে সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লায় নিয়ে আসে এবং বর্তমানে তাকে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান এএসপি রাশেদুল।

তিনি আরও বলেন, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কেন তারা ধর্ষণের শিকার নারীকে উদ্ধার না করে উল্টো মারধর, গালিগালাজ এবং নগ্ন ভিডিও ধারণ করল—তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শুধুমাত্র ফজর আলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের বিষয়টি ভুক্তভোগী উল্লেখ করেননি। তবে ভিডিও ধারণ ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আইসিটি আইনে পৃথকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ফজর আলীকে গ্রেপ্তারের পর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং ভিডিও ছড়ানোয় জড়িত চারজনকে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।