রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

যশোরে প্রধান ডাকঘরের নৈশপ্রহরীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্ত্রীর দাবি হত্যা

যশোর প্রতিনিধি : যশোর প্রধান ডাকঘরের নৈশপ্রহরী রবিউল ইসলামের (৩৫) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৬ মে) কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। তিন মাস আগে বদলি হয়ে তিনি যশোরে যোগদান করেছিলেন।
এদিকে নিহতের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। তার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারেন না বলে দাবি করেছেন।
নিহত রবিউল ইসলাম মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার ধুয়াইল গ্রামের আকবর আলীর ছেলে।
প্রধান ডাকঘরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল কার্যালয়ের সুপার মনিরুল আল নূর জানান, রবিউল নিয়মিত নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। শনিবার রাতেও তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য বাসা থেকে কর্মস্থলে আসেন। সোমবার সকালে ডাকঘরের পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচতলার একটি রুমে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন সহকর্মীরা। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
সহকর্মী দাউদ হোসেন ও জিয়াউর রহমান জানান, সকালে কর্মস্থলে এসে তারা অফিসের নির্মানাধীন বিশ্রাম কক্ষে জান। সেখানে উপস্থিত হয়ে ফ্লোরে রবিউলের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার গলায় অল্প ব্যান্ডেজের কাপড়ের রশি পেঁচানো ছিল। আর অল্প ব্যান্ডেজ ছাদের আড়ার সাথে ঝুলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ব্যান্ডেজের কাপড় হওয়ায় ছিড়ে নিচে পড়ে মাথা ফেটে কার মৃত্যু হয়েছে।

শ্যালক শামীম জানান, তার দুলাভাই রবিউল মাগুরা থেকে তিন মাস আগে বদলি হয়ে যশোর প্রধান ডাকঘরে যোগদান করেন । তার এক মেয়ে, এক ছেলে স্ত্রী মাগুরায় থাকেন। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বুঝতে পারছেন না।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর থেকে পোস্ট অফিস এলাকায় অপরাধের রাজ্যে পরিণত হয়। মাদক সেবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজন ভোর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে। এই প্রকৃতির লোকেদের সাথে নৈশপ্রহরীর গোলযোগ হতে পারে। অপরাধীরা তাকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে যেতে পারে। কিন্তু শরীরের ভারে দড়ি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যেতে পারেন রবিউল।

নিহতের বড় ভাইরা ফরহাদ হোসেন জানান, রবিবার দিনগত রাতে মোবাইল ফোনে রবিউল তাকে জানান, বদলিজনিত কারণে যশোরের চলে এসেছেন। ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে মাগুরায় রেখে আসছেন। তাদের দেখাশোনা করে রাখতে বলেছিলেন। সকালে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে যশোরে আসেন। তিনি আরো জানান, রবিউল আত্মহত করার মানুষ না। কেউ তাকে হত্যা করেছে।
নিহতের স্ত্রী রিমি আক্তার জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো রবিবার রাত ১১টার সময় স্বামীর সাথে পারিবারিক কথা হয়।তিনি আরো জানান তার স্বামীর আত্মহত্যা করার কোন প্রশ্নই আসে না। কেউ তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা নাটক সাজিয়েছে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, মাগুরা এলাকায় সাজ্জাদ, নয়ন, আলামিনসহ ৫/৭ জনের কাছে তার স্বামী (রবিউল ইসলাম) লাক্ষাধিক টাকা পেতেন। এ নিয়ে গত সপ্তাহে মাগুরায় নয়নের সাথে সালিশি বৈঠকে নয়ন স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয়। এর এক সপ্তাহ পরেই স্বামীর মৃত্যু হয়। হাজারো সমস্যার মধ্যে কখনো তিনি আত্মহত্যা করেননি। তার স্বামীকে কেউ হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার সাকিরুল জানিয়েছেন, পুলিশ বেলা ১১টার দিকে মৃত লাশ নিয়ে আসেন।বহনকৃত মৃত হিসাবে খাতায় অন্তর্ভুক্ত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মগে প্রেরণ করা হয়েছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশ প্রশাসনের একাধিক টিম তার মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আত্মহত্যা ধরনা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে রবিউলের মৃত্যু ‘হত্যা নাকি আত্মহত্যা ‘ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।