মুক্তবাণী অনলাইন : বাংলাদেশ সংখ্যানুপাতিকভাবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোনো কোনো দল সরকারের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা হাসিল করতে চায়, তারা সুকৌশলে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পেশাজীবীদের অবদান ও শহীদ নির্যাতিত পরিবারকে সম্মাননা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এর আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য ও নির্যাতিতরা।
জুলাই আন্দোলনে দেশের মানুষের অবদানের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, এক বছর হয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই এক বছর হবে। কিন্তু এই বছরে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের যে তালিকা হতে হবে, সেই তালিকাটা চূড়ান্ত করা হয়নি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে শহীদদের তালিকা এক বছরে না হওয়াটা ভবিষ্যতে আমাদের সকলের জন্য চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসেবে চিত্রায়িত হবে বিষয়টি।
তারেক রহমান বলেন, দুঃখজনক একটি বিষয় আমরা দেখি, গণঅভ্যুত্থানের কৃর্তত্বকে কুক্ষিগত করার জন্য অনেকেই বিভিন্নভাবে তৎপর। শহীদদের তালিকা করার ক্ষেত্রে যদি এই তৎপরতা যদি থাকতো, এতোদিনে হয়তো একটা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে পারতাম। তিনি আরও বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো, সরকার যেভাবে পরিচালনা হচ্ছে, প্রায়োরিটি ভিত্তিতে কিছু ইস্যু মনে হয় থাকা দরকার। রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে নিত্যনৈমিত্তিক নতুন ইস্যু যদি সংযুক্ত হয়, তবে বিভিন্ন রকম সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আমাদেরকে প্রায়োরিটির মধ্যে থাকতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যূত্থানের এক বছর পরও ক্যাম্পাসগুলোতে লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। আমাদের ক্যাম্পাসগুলোকে অন্ধকারে রেখে, পুথিগত সংস্কার দিয়ে আলোকিত বাংলাদেশ গড়বো এটা যদি চিন্তা করি, সেটা সম্ভব কিনা এটা উপস্থিত সকলের কাছে এই জিজ্ঞাসাটি আমি রাখতে চাই।
পিআর পব্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল হঠাৎ করেই পিআর পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করছেন এবং দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে প্রবর্তনের ব্যবস্থার অর্থ কিন্তু রাষ্ট্রে এবং রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থা বিকাশের পথ সুগম করে দেওয়া। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা- এটা কিন্তু বিভ্রান্তিমূলক সমাজ সৃষ্টি এবং সরকারের প্রতি হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে বা উঠবে। দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। দেশের জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য চাইলে আমরা মনে করি, কোনোভাবেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত না।
তারেক রহমান বলেন, কোনো কোনো দল সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দেখলেও দেশ এবং জনগণের স্বার্থে বিএনপি বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিকভাবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে আমরা মনে করি। কারণ আমরা যদি দেখি ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানই আরেকবার প্রমাণ করে, দেশকে যদি তাঁবেদার মুক্ত রাখতে হয়, ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাখতে হয়, তাহলে কিন্তু জনগণের ঐক্যই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
তারেক রহমান বলেন, সংবিধিবদ্ধ বিধান, আইন-কানুন দিয়ে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচারকে রোধ করা যায় না। আইন-কানুন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদ ও অটোক্র্যাট মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এটি ঠেকাতে চাইলে জনগণকে যেকেনো মূল্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। জনগণকে সকল প্রকার অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। জনগণের ঐক্য অটুট থাকলে যে কোনো ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে পারে। বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি সেই প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছে।
তারেক রহমান বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখা যাবে বা মানুষ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে যারা বন্দুক রেখে সরকারের ওপর নিজেদের প্রভাব বহাল রাখতে চায়, সরকারের ওপর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নভাবে ফায়দা হাসিল করতে চায়, তাদেরকেই আমরা দেখছি সুকৌশলে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থান কারো একার কৃতিত্ব নয়। এখানে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ আছে। নিত্য নতুন দাবির আড়ালে আামরা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা যেন ভুলে না যাই। প্রতিদিনিই নিত্যনতুন দাবি আসছে। আজকে এখানে কিন্তু অনেকেই এই কথাই বলেছেন। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবেন না।জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা এবং প্রতিষ্ঠানের নাম শহীদদের নামে নামকরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করে তারেক রহমান। এ সময় তিনি উত্তরার বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতে ঘটনায় সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।