বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১২ সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সরকারি চাকরির সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি চাকরি পূর্বের অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।অস্পষ্টতা সৃষ্টি করা ‘অনানুগত্য’ শব্দটি তুলে দিয়ে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে সরকারের ‘বৈধ আদেশ’ অমান্য করাকে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বুধবার রাতে নতুন অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশে পরিমার্জন করে তিন ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের কথা বলা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশের ৩৭ এর ক ধারায় ‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান’- এ বলা হয়েছে, আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালায় যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী-

ক. ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এসব কাজে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন

খ. ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন

গ. যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন

তাহলে এটা ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসেবে গ্রহণ করে দণ্ড দেওয়া যাবে।

আগের অধ্যাদেশের ‘সরকারি কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যার কারণে অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে’ বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ অপরাধের জন্য নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত- এই তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে নতুন অধ্যাদেশে।

আগের অধ্যাদেশে দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ বা চাকরি থেকে অপসারণ, চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছিল।

শাস্তি নিশ্চিতে এক সদস্যের বদলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। কমিটিতে একজন নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রয়েছে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও।

তবে আগের অধ্যাদেশের মত রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ এখানে রাখা হয়নি।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। এর প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

সরকারি চাকরি আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে পুরোনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামে একটি ধারা সংযোজন করা হয়। নতুন এই ধারায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়ী হলে সাত দিন করে নোটিস দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছিল।

বলা হয়েছিল, কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে; ২. এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উসকানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে।

৩. কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।

সেই অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে তখন আন্দোলন শুরু করেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ওই পরিস্থিতিতে গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি আন্দোলনরত কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর গত ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদন করে, যা এখন অধ্যাদেশ আকারে জারি হলো।