নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একেএম নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়েছে জনতা। রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর উত্তরায় স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রোববার রাতে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। মামলা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
নুরুল হুদাকে আটক করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিও দেখা যায়, স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে রেখেছে। তার গলায় জুতা ঝুলিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।
নুরুল হুদা গলায় জুতার মালা পরিহিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন বলেন, ‘ও যে স্বৈরাচার সৃষ্টি করেছে এটা (জুতার মালা) তার উপহার। ও আর স্বৈরাচার সৃষ্টি করতে পারবে না।’
ফেসবুক ব্যবহারকারী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম লিখেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা কট… পরানো হলো জুতার মালা।
‘ফ্যা’সি’স্ট হাসিনার অবৈধ নির্বাচনের হোতা নুরুল হুদাকে জু’তার মালা পরালো জনতা’ উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন- আগামীতে যে বা যারা সম্ভাব্য ফ্যা’সি’বা’দের দা’লা’লি করে জনগণের ভোটাধিকার হরণে সহযোগিতা করবে তাদের জন্য এ দৃশ্যে রয়েছে শিক্ষা।
এই ফেসবুক ব্যবহারকারী আরও লিখেছেন- আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবৈধভাবে ‘জনতার মঞ্চ’-এ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাকে যুগ্ম-সচিব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০০১ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে অন্যান্য কর্মকর্তাসহ নুরুল হুদা ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কেএম নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এছাড়াও তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে কেএম নূরুল হুদা কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পাঁচ বছরের মেয়াদে একাদশ সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনসহ বিভিন্ন স্তরের প্রায় পাঁচ হাজার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে কমিশনটি।
বেশিরভাগ ভোট নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এমনকি সমালোচনা ছিল কমিশনের ভেতরেও। তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ আলোচিত কিছু পদক্ষেপ দেখা গেছে এ কমিশনের আমলে।
অবশ্য কমিশন দাবি করে- ‘দে ডিড দেয়ার বেস্ট’। আইনের মধ্যে সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছে তারা।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
সাবেক এই তিন সিইসি হলেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলার আবেদন জমা দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করা হয়, তাদের মধ্যে আছেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা।
এ তালিকায় আরও আছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা।
অভিযোগে আরও আসামি করা হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে।
অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ আছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমানসহ তৎকালীন নির্বাচন সচিবেরও নাম আছে ওই আবেদনে।
এর আগে আজ সকালে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের কাছে আরেকটি আবেদন জমা দেয় বিএনপির প্রতিনিধিদলটি।
আবেদনে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা–কর্মীদের গ্রেফতার, গুরুতর জখম ও হত্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ওপর হওয়া হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।