নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর সূত্রাপুরে অভিযান চালিয়ে একাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের পাঁচ শতাধিক নকল পাঠ্যবই উদ্ধার করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ডালপট্টি এলাকায় পরিচালিত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন এনসিটিবির সম্পাদনা বিভাগের মাধ্যমিক সম্পাদক ড. মো. ছাইদুর রহমান। অভিযানে সহায়তা করে সূত্রাপুর থানা পুলিশ।
অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানায়, মীম প্রিন্টার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনপ্রাপ্ত চারটি প্রেস- অগ্রণী প্রেস, মানামা প্রেস, ফাহিম প্রেস এবং আনন্দ প্রেস- এর বই নকল করে বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছিল। এনসিটিবির অনুমতি ছাড়াই নিম্নমানের কাগজ ও কালি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর বই ছাপিয়ে তা কম দামে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এতে অনুমোদিত প্রেসগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে।
সূত্রে জানা গেছে, বই নকলের পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। একটি প্রেসের নামে বই মুদ্রণ, অন্য একটি স্থান থেকে বাইন্ডিং এবং পৃথক জায়গা থেকে কভার পেজ ছাপানো হয়। এমনভাবে কাজটি পরিচালনা করা হয়েছে যাতে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে অভিযান চালিয়েও মূল হোতাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়।
সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হেলালের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে আশরাফ বুক বাইন্ডিং নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নকল বই জব্দ করা হয়। বাবুবাজার এলাকা থেকে ছাপানো হয় বইয়ের কভার পেজ। মূল ছাপার কাজটি করেছে মীম প্রিন্টার্স, যারা আগে এনসিটিবির বই মুদ্রণের কাজে যুক্ত ছিল। চলতি বছর টেন্ডারে অংশ নিয়েও কাজ না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে বই ছাপাতে শুরু করে।
অভিযান চলাকালে মীম প্রিন্টার্সের মালিক আব্দুর রাজ্জাক পালিয়ে গেলেও বাইন্ডিং কারখানার মালিক নাজমুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাজমুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানাধীন মীম প্রেসে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ছাপা ফর্মা উদ্ধার করা হয়। এ সময় চারজন মেশিনম্যানকে আটক করা হয়।
তারা জানিয়েছেন, প্রেসে এখনো বিপুল পরিমাণ কাগজ ও সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে।
নাজমুল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, নকল বই ছাপার সঙ্গে বিপ্লব ও সম্রাট নামে আরও দুই ব্যক্তি জড়িত। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। অভিযানের সময় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির একটি পরিদর্শক দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
অভিযান শেষে এনসিটিবির কর্মকর্তারা সূত্রাপুর থানায় উপস্থিত হয়ে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। রাত ৮টায় মামলাটি প্রক্রিয়াধীন ছিল বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, অনুমোদিত প্রেসগুলোকে শতকরা ১২ শতাংশ রয়্যালটি দিয়ে বই ছাপানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়াই নকল বই ছাপিয়ে বাজারে সরবরাহ করে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রকাশনা খাতে অনিয়মের বড় উদাহরণ। এনসিটিবি প্রতি বছর বাজারে নজরদারি চালালেও এবারও এমন একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।