রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আদালতের চাপ ও দোষ স্বীকার, চুক্তির সম্ভাবনা, শেষ হতে পারে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

মুহাম্মাদ শোয়াইব


ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মাআরিভ জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে পৌঁছেছে বিচারিক কার্যক্রম, যা তাকে একটি “দোষ স্বীকার” চুক্তিতে বাধ্য করতে পারে—এবং এর ফলে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
বিপজ্জনক মোড়: ‘ক্রস এক্সামিনেশন’ শুরু হতে যাচ্ছে
মাআরিভের রাজনৈতিক প্রতিবেদক আনা বারেস্কি লিখেছেন, নেতানিয়াহুর আসন্ন আজারবাইজান সফর শুধু একটি কূটনৈতিক সফর নয়, বরং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। সফরটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিতে পারে।
এ সফরকালেই শুরু হওয়ার কথা ‘ক্রস এক্সামিনেশন’ বা প্রতিপক্ষ আইনজীবীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব—যা যে কোনো অভিযুক্তের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ধাপ। এই পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ নেতানিয়াহুকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি করবে, যেগুলোর উত্তর আগে থেকে জানা নেই, এবং যেখানে তার বক্তব্যে অসঙ্গতি ধরা পড়লে আইনি ও জনমত—উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধাক্কা খেতে পারেন।
পুরনো আলোচনা ফিরে এলো নতুন বাস্তবতায়
২০২২ সালে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘দোষ স্বীকার চুক্তি’র আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু তা ভেঙে পড়ে নেতানিয়াহুর অনিচ্ছার কারণে—তিনি রাজনৈতিক বিদায়ের “নৈতিক লজ্জা” নিতে চাননি। কিন্তু এখন যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও জনপ্রিয়তা হ্রাসের প্রেক্ষাপটে সেই চুক্তির বিষয়টি আবার সামনে এসেছে, এবার অধিক গুরুত্বসহকারে।
মাআরিভ জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিচার বিভাগ এখন নেতানিয়াহুকে “সম্মানজনক প্রস্থানের” সুযোগ দিতে বেশি আগ্রহী। নেতানিয়াহুর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেন, “মূল বিষয় হলো সে যেন চলে যায়, ব্যস।”
জনমত ও দলের ভিতরে চাপ
এক সময় যেসব মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী নেতানিয়াহুর শক্ত সমর্থক ছিলেন, তারাই এখন তাকে বিভাজনের প্রতীক মনে করছেন। এমনকি তার নিজের দল লিকুদ পার্টি ও জোটের সমর্থনও ক্ষয়প্রাপ্ত—আগামী নির্বাচনে তাদের আসনসংখ্যা ৫০-৫২-তে নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।
রাজনৈতিক কৌশল ব্যর্থ: সৌদি চুক্তি ও ট্রাম্প প্রত্যাবর্তনের আশা ম্লান
৭ অক্টোবরের ঘটনার পর নেতানিয়াহু আশায় ছিলেন যে, হয়তো সৌদি আরবের সাথে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরাগমনের মাধ্যমে তিনি জনসমর্থন ফেরাতে পারবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প নিজেই ইরানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছেন এবং সৌদি চুক্তির সম্ভাবনাও সংসদীয় বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব।
বিপরীতভাবে, বিরোধী দলগুলোর (যেমন ইয়াইর লাপিদ ও বেনি গান্তস) অবস্থান স্পষ্ট—তারা নেতানিয়াহুর অধীনে কোনো ঐক্যমত্যভিত্তিক সরকারে যেতে রাজি নন।
সম্মানজনক প্রস্থান নাকি আদালতের অপমানজনক পরিণতি?
এই প্রেক্ষাপটে নেতানিয়াহুর সামনে এখন দুটি পথ খোলা—একটি হলো দীর্ঘ আদালত প্রক্রিয়ায় সম্মানহানির ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, অন্যটি হলো রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে একটি দোষ স্বীকার চুক্তি গ্রহণ করা, যা তাকে কিছুকাল জনজীবন থেকে সরিয়ে রাখবে, তবে “অপমান” নয়, বরং একটি “রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বারেস্কির ভাষায়, নেতানিয়াহু এখনো ‘ধোঁয়াটে’ অবস্থানে রয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেন শেষ মুহূর্তে। তবে পরিস্থিতি তাকে দ্রুত একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে।
সংক্ষেপে, ইসরায়েলি রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘতম ও বিতর্কিত নেতার জন্য এখন সময় এসেছে হয়তো চূড়ান্ত বিদায়ের।

এসএসএইচ.