সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় চীনের সক্রিয় ভূমিকা, প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ

মুহাম্মদ শোয়াইব

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন মোড় নিচ্ছে। এর পেছনে যেমন রয়েছে দীর্ঘদিনের সীমান্ত দ্বন্দ্ব, তেমনি এর পটভূমিতে রয়েছে ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ধারা, যা দেশটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে তুলছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা হিসেবে সামনে এসেছে। সম্প্রতি লাহোরে নিযুক্ত চীনা কনসাল ঘোষণা দেন, “পাকিস্তানের পাশে চীন ছিল, আছে এবং থাকবে।” এটি শুধু একটি কূটনৈতিক বার্তাই নয়, বরং ভারতের প্রতি একটি কৌশলগত সতর্কতা।

চীন ইতোমধ্যে পাকিস্তানের অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এবং গ্বাদার বন্দরের উপর নির্ভরতা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো সামরিক পদক্ষেপ চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে বলেই গণ্য হতে পারে।

ভারতের রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এক কংগ্রেস বিধায়ক তার পোস্টে লিখেছেন, “যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের পরাজয় অনিবার্য, কারণ তাকে একইসঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের মোকাবিলা করতে হবে।”

এই পরিস্থিতিতে ভারতের ঐতিহ্যগত মিত্র রাশিয়া, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রও অনেকটাই নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে, যা ভারতকে আঞ্চলিকভাবে কিছুটা একঘরে করে তুলেছে।

এমন এক সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে যুদ্ধবিমান প্রযুক্তি উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের ওপর তার তাৎক্ষণিক ও বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে। সীমান্তে শরণার্থীর ঢল, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ স্থগিত হওয়া এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সবই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তিনটি স্তরে কৌশল তৈরি করতে হবে:
১. সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
২. কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, কারণ একদিকে ভারতের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সম্পর্ক, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত নির্ভরতা রয়েছে চীনের ওপর।
৩. সামরিক সক্ষমতা উন্নয়ন করা, যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করা যায়।

যদিও অনেক বিশ্লেষক এখনো সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনাকে কম বলে মনে করছেন, তবে সীমান্তে হামলা, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ এবং যৌথ সামরিক মহড়াগুলো যুদ্ধের আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। তাই বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চল এক অজানা অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এসএসএইচ.