মোঃ কাইছারুল ইসলাম, কক্সবাজার : ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সাগরের নোনাজলে পর্যটকেরা আনন্দে মাতলেও ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। সমুদ্র সৈকতের বীচ কর্মীদের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে গোসল করতে নামা ও অসচেতনাতার ফলে ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ ছয়জনের মৃত্যু ঘটে। দীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একাধিকস্থানে গভীর গর্ত ও গুপ্তখালের সৃষ্টি হওয়া, অতিরিক্ত সাগরের মাঝে চলে যাওয়া, ভাটার সময় সাগরে নামা এবং নির্দিষ্ট স্পটের বাহিরে যাওয়াই হচ্ছে বিপদের কারণ। পর্যটকদের উদ্ধারে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও জনবল। ফলে সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের মৃত্যু ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। দেশে নানা অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও পর্যটন এলাকায় পর্যাপ্ত উন্নয়নসহ নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা।
ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক সাগরে নামেন গোসল করতে। কিন্তু সমুদ্রের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পর্যটন খাত থেকে হোটেল-মোটেল মালিক এবং সরকার বিপুল টাকা আয় করলেও নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবাই উদাসীন। ১২০ কিলোমিটারের এই সৈকতের মাত্র ৫ কিলোমিটারে (কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত) উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য বেসরকারি একটি সংস্থার ২৬ জন কর্মী রয়েছেন। অবশিষ্ট ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত পড়ে আছে। বিশেষ করে টেকনাফ, বাহারছড়া, পাটোয়ারটেক, ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, কলাতলী পয়েন্টের সৈকতে কেউ গোসলে নেমে নিখোঁজ হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কেউ নেই
যার ফলে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে পিতা-পুত্রসহ ৬জনকে। গত ৮জুন লাবণী পয়েন্টে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার দেওয়ান বাজার বড় পুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত নজির আহমদের পুত্র মোঃ রাজিব আহমদ (৩৫), কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম বাহারছড়ার জেলে নুরু, রাজশাহী সদর উপজেলার শাহিনুর (৬০) ও পুত্র সিফাত (২০) কলাতলী পয়েন্টে, ক্যাম্প-২ইষ্ট রোহিঙ্গা জালাল আহমদ ইনানী পয়েন্টে, ১০ জুন ক্যাম্প-৯ রোহিঙ্গা মোঃ শরীফ আলী (১২) ইনানী । লাইফ গার্ড ও বীচ কর্মীরা জানান, এই ৬ জনের মৃতদেহ বিভিন্ন সময়ে ভিন্নভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪ জনকে।
বীচে লাইফ গার্ডের দায়িত্বরত মাহবুব জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অসচেতনতা, নিষেধ করা সত্ত্বেও পর্যটকদের সমুদ্রের পানিতে নামা। গোসলের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আরও গভীরে চলে যাওয়া। লাইফ গার্ড কর্মীদের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরও দর্শনার্থীদের তা উপেক্ষা করা। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টেই এই বিড়ম্বনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বিপজ্জনক সময়গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার সময়ও কিছু পর্যটকদের সাথে রীতিমত ঝামেলার সম্মুখীন হন লাইফ গার্ড কর্মীরা।
ফলশ্রুতিতে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এই অসতর্কতা ও নিরাপত্তাজনিত নির্দেশনা অমান্য করাই মূলত দায়ী মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জন্য।