রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তাইওয়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলের কাছে বুধবার সন্ধ্যায় ৫.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। এতে রাজধানী তাইপের ভবনগুলো কাঁপতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়দের বরাতে জানিয়েছে এএফপি।

ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল হুয়ালিয়েন শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার (৪৪ মাইল) দক্ষিণে, উপকূলের কাছাকাছি সাগরের নিচে, প্রায় ৩১ কিলোমিটার গভীরে। এটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা (গ্রিনউইচ সময় ১১:০০ টা)-এর কিছু পর আঘাত হানে।

তাইওয়ানের উপকূলবর্তী শহর চেংগং-এর একজন দমকল কর্মী বলেন, ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার স্ক্রিন আর ফ্যানগুলো প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে শুরু করে। আগের ভূমিকম্পগুলোর চেয়ে এটি অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাইরে দৌড়ানোর কথা চিন্তা করি।

হুয়ালিয়েন ও তাইতুং দমকল বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর নেই। ভূমিকম্পের পরেও পূর্বাঞ্চলের রেলসেবা স্বাভাবিকভাবেই চলছিল।

তাইতুং-এর দমকল কর্মী অ্যান্ড্রু লিউ জানান, ভূমিকেন্দ্রের কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ২৫ জন দমকল কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক এবং ৫টি যানবাহন পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলটি বেশ দূরের এবং জায়গাগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি। তাই প্রতিটি এলাকায় পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে’।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সতর্কতা :

তাইওয়ান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। কারণ এটি দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে এবং প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার-এ অবস্থিত, যা বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

এর আগে ২০২৪ সালের এপ্রিলে তাইওয়ানে ৭.৪ মাত্রার একটি মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছিল, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেই ভূমিকম্পে অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে, বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভূমিধস দেখা দেয়।

তাইওয়ানে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, যার মাত্রা ছিল ৭.৬ এবং এতে প্রায় ২,৪০০ জন প্রাণ হারান। তাইওয়ানের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

এরপর থেকে তাইওয়ান তার ভবন নির্মাণ বিধিমালা শক্তিশালী করেছে। এখন ভূমিকম্প সহনশীল নির্মাণে ইস্পাতের রড ব্যবহার করা হয়, যা ভবনগুলোকে ভূকম্পনের সময় নমনীয়ভাবে দুলতে সাহায্য করে।

তাইওয়ান তার প্রযুক্তিনির্ভর ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করেছে, যা ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জনগণকে সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম। এই ব্যবস্থা এখন স্মার্টফোন, উচ্চগতির ইন্টারনেট ও দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।