রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চাই না


এম আবদুল্লাহ
ঈদের আগে ৪ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন ইস্যুতে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে হয়েছিল। সভাটি মূলতঃ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ তৈরির অংশ হিসেবেই আয়োজন করা হয় বলে মনে হয়েছে। বিএনপি’র প্রথম সারির কয়েকজন নেতা ছাড়াও সমমনা প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীরা এতে অংশ নেন। সবাই প্রায় অভিন্ন কন্ঠে ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পাঁয়তারা করছেন অভিযোগ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের কি কি ‘সর্বনাশ’ হবে তা তুলে ধরেছিলেন। কঠোর ভাষার তীরে বিদ্ধ করে সরকারকে এক হাত নেন কয়েকজন আলোচক।
আলোচনায় জুলাইয়ে বিএনপি মাঠে নামলে ড. ইউনূসের সরকার পালানোর পথ পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন কেউ কেউ। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে পারলে ইউনূস সরকার দশ মাসেও কেন পারলেন না সে প্রশ্ন তুলেন দু’একজন। আমি বলেছিলাম ভিন্ন কথা। হুমকি-ধামকি দিয়ে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব না বাড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সময় নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধান করতে বলেছিলাম। এটাও বলেছিলাম- প্রয়োজনে জাতির অভিভাবক, গণতন্ত্রের মা হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্যে। মঞ্চে বসা অনেক হেভিওয়েটকে দেখলাম খালেদা জিয়াকে কাজে লাগানোর প্রস্তাবে ভ্রুকুটি করতে। আমি যেন বাস্তবতাবিবর্জিত প্রস্তাব করে বসেছি।
৪ জুন থেকে ৭ জুন। মাঝে ব্যবধান ৩ দিনের। ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন অসুস্থ, মজলুম নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায়। তখন তিনি সিনিয়র নেতাদের কাছে জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এত দূরত্ব তৈরি করা হলো কেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এই সময়ে কোনো বিষয় নিয়ে রাজপথে যাওয়া ঠিক হবে না। যত সমস্যাই থাকুক, আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে। ড. ইউনূস ক্ষমতা ছেড়ে দিলে দৃশ্যপট কী হবে, সেটাও মাথায় রাখতে বলেন অভিজতা ও প্রজ্ঞায় ঋদ্ধ নেত্রী।
স্থায়ী কমিটির নেতাদের এই সাক্ষাতের পরদিন রোববার খালেদা জিয়া তাঁর বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা বলেন। এরপরই ৯ জুন সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। এই সভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠককে স্বাগত জানানো হয়। চূড়ান্ত হয় ১৩ জুন সকালে দু’জনের মধ্যে বৈঠক হবে। ১০ জুন দুপুরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠককে ‘এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ইভেন্ট’ বলে মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল সেদিন বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মিটিংটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতৃবৃন্দের (মুহাম্মদ ইউনুস-তারেক রহমান) ওপর, তাঁরা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি, তাঁর সাফল্য প্রার্থনা করেছি।’
আগের প্রেক্ষাপট সবার জানা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ তাদের সমমনা বিভিন্ন দল। ২৮ মে রাজধানীর নয়াপল্টনে তারুণ্যের বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বেশ কঠোর ভাষায় উচ্চারণ করেন- ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে। নির্বাচন ডিসেম্বরেই হবে।’ এর মধ্যেই ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঘোষণা করেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা বিএনপি মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টির কথা জানান। বক্তব্যের ভাষা নিয়েও লিখিত প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ জানায় দলটি।
প্রসঙ্গত একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে চাই। ১০ জুন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব, সজ্জন ব্যক্তিত্ব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি যে সোফায় বসে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, ঠিক তাঁর মাথার ওপর ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবিতে চোখ আটকে গেলো। এর আগে বহুবার তাঁর বাসায় গেলেও এ ছবিটি আমার নজরে পড়েনি। ছবিটিতে মির্জা ফখরুল একজনকে ফুলের তোড়া দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তিনি আর কেউ নন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবিটির দিকে তাকাচ্ছিলাম, আর ভাবছিলাম- দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা যাঁকে সম্মান দিতে মাথার ওপর স্থান দিয়েছেন, তাঁকে দলেরই কোন কোন নেতা কতটা নিকৃষ্ট ভাষায় আক্রমন করে চলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ড. ইউনূস যে কত খারাপ, সুদখোর ও ক্ষমতালোভি তা প্রমাণ করার জন্যে নোংরা ভাষার প্রয়োগের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। স্থায়ী কমিটির এক নেতার ভাষায়- ‘ড. ইউনূস ফ্যাসিবাদী আচরণে শেখ হাসিনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন’। আরেকজনের মতে- বিএনপি চব্বিশের ৫ আগস্টে ‘কুকুরের মুখ’ থেকে উদ্ধার পেয়ে ‘বাঘের মুখে’ পড়েছে।
লণ্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরেও কম নোংরামি হয়নি। বৈঠকটি যে তারেক রহমান বা বিএনপি চায়নি, ড. ইঊনূস বা সরকার পক্ষের আবেদন-নিবেদনে বিএনপি ‘দয়া করে’ রাজি হয়েছে-এমন একটা ধারনা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে হেয় করার প্রাণান্ত চেষ্টা চোখে পড়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদের বিশ্বস্ত দোসর কয়েকটি মিডিয়া এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তারা উস্কানিমূলক এমন কয়েকটি ভাষ্য ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যাতে বৈঠকটি সফল না হয়। প্রেসক্লাবে এক আড্ডায় রসিকতা করে বলেছিলাম- ‘ভাগ্যিস ৫ দিন সংবাদপত্র বন্ধ ছিল। চালু থাকলে- হয়তো ইউনূস-তারেক বৈঠক ভণ্ডুলই হয়ে যেতো’। শেষ পর্যন্ত শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয় হয়েছে। বৈঠক ঘিরে দেশে-বিদেশে যে কৌতূহল ও উৎকণ্ঠা ছিল, সেটার সফল সমাপ্তি ঘটেছে।
জুমাবারে বিলাতের আলোজ¦লমল হোটেল কক্ষের সঙ্গে হেসেছে গোটা বাংলাদেশ। অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দেড় ঘন্টার বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের এক সপ্তাহের মাথায় লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কিছুটা শর্তযুক্ত নতুন ঘোষণা এল। ধারণা করা হচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগুলে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন বহু সংলাপই হয়েছে , যার ফল শেষ পর্যন্ত ‘অমীমাংসিত‘ থেকে গেছে । জনগণ বারবার হতাশ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড . মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের ফলাফল নিয়েও সংশয় ছিল। দু’পক্ষ অনঢ় থাকলে সংকট আরও গভীর হতে পারতো। দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যকার বৈঠকটি কেবল রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, তার জবাব বা সমাধানসূত্রও পাওয়ার আশা দানাবেঁধেছিল জনমনে । গত দশ মাসে ড . ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের একাধিকবার কথা হলেও সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হলো প্রথম। ফলে বৈঠকটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক সমঝোতার এক গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং-ইভেন্ট।
এখন আলোচনা হচ্ছে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ এক ঘন্টার বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ ছাড়া আর কী আলোচনা হয়েছে। এটা জানা সহজ নয়। তবে আগামী দিলগুলোতে সরকারের পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বৈঠকের প্রভাব স্পষ্ট হতে পারে। ধারনা করা হয়- স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠান, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ নিয়ে সৃষ্ট উত্তাপ, জুলাই সনদের কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা, রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোয় সংস্কার, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়ে থাকতে পারে। এসব বিষয়ে ফলাফল দেখা যাবে আগামী দিনগুলোতে।
দেশপ্রেমিক জনগণ শুধু নির্বাচনের তারিখ নয়, গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্খা পূরণে দু’পক্ষের কাছেই দায়িত্বশীলতা, সংযম ও বাস্তববানুগ পদক্ষেপ আশা করে । সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্যে অপরিহার্য। নির্বাচনী পরিবেশ, সবার জন্যে লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেওয়া বাঞ্ছনীয়। পারষ্পরিক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিবর্তে দরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ঐকান্তিক ও সাহসী উদ্যোগ। বিশ্বাস করি এসব বিষয়ে লণ্ডন বৈঠকে দু’পক্ষই সদিচ্ছার জানান দিতে পেরেছেন। বাস্তবতা উপলব্ধি করে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ঘটনাকে বিবৃতি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। দলগুলো বলেছে, এর মাধ্যমে জাতি স্বস্তির বার্তা পেয়েছে। জামায়াতের আমীর লণ্ডনে তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফিরে রমজানের আগে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। ফলে ফেব্রুয়ারি তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সেখানে নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণকে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে। তারা সংস্কার ও গণহত্যাকারিদের বিচারে কাঙ্খিত অগ্রগতি সাপেক্ষে যে কোন সময় নির্বাচনের ব্যাপারে আগেই মত দিয়েছে।
লণ্ডন সমঝোতায় জাতির জন্যে স্বস্তির বার্তার মধ্যেও একটি মহলে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগের নতুন প্রশ্রয়কেন্দ্র সিপিবি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যারা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে মুখিয়ে ছিল, তারা হতাশ হয়েছে। এমন আভাসও মিলেছিল যে, জুলাইয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি মাঠে নামলে সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে গণঅভ্যুত্থানে পতিত শক্তি নানা কৌশলে, ভিন্ন রূপে মাঠে নামবে। আন্দোলনের তোড়ে অল্প সময়ের মধ্যে ড. ইউনূস সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে-এমন আশা ছিল তাদের। নতুন সরকার গঠনে সৃষ্ট সংকটের সুযোগ গ্রহণের সব ছকও তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
সম্ভাব্য সে ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে জাতিকে রক্ষায় ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের ডিসেম্বরে অনঢ় অবস্থান থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়ে বিকল্প হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার পরামর্শ দেন। ২ জুন রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাড়ির নামজারির কাগজপত্র পৌঁছে দিতে তাঁর বাসভবনে যায় সরকারি একটি প্রতিনিধিদল। দলের নেতৃত্ব দেন সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী গণপূর্ত ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। ওই প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে খালেদা জিয়া নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারণের বিষয়ে বার্তা পাঠান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে লণ্ডন বৈঠকের শুরুতে তারেক রহমান বেগম খালেদা জিয়ার সালাম পৌঁছান। এ সময় ড. ইউনূসকে বলতে শোনা যায়-‘তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব’। যৌথ বিবৃতিতেও খালেদা জিয়াকে উদ্বৃত করা হয়েছে। তিনি যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছেন তা বাদ যায়নি। আগামী দিনেও যে কোন সংকটে তিনি বলিষ্ঠ ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রত্যাশা করি। তারেক রহমানও অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অভিজ্ঞতালব্ধ। অভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন বক্তব্যে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব একটি বড় সীমাবদ্ধতা। তিনি দেশে ফিরে সশরীরে দলের হাল ধরলে বিদ্যমান পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি রাজনীতির অপরিহার্য অনুসঙ্গ। নির্বাচিত সরকারে উত্তরণ পর্যন্ত অনেক ফাঁদ থাকবে। উস্কানি থাকবে। দায়িত্বশীলতা ও বিচক্ষণতায় ছেদ পড়লে যে কোন সম্ভবনাময় রাজনৈতিক দলও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ার উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। সে তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক