শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

চিকেনস নেকের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের নতুন উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করতে রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি। ২০৩০ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে রেলপথে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল শিলিগুড়ি করিডোর বা পরিচিত ভাষায় ‘চিকেনস নেক’-এর ওপর নির্ভরতা কমানো। -সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস।

মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এই করিডোরটিই ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে স্থলপথে যুক্ত করার একমাত্র পথ। ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটিকে ভারতের ‘ভূ-রাজনৈতিক চোকপয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় এটি সামান্য ঝুঁকির মুখেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

রেল সংযোগ বাড়ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে :

আসাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশের পাশাপাশি এবার মিজোরামও জাতীয় রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে। মিজোরামের ৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বৈরাবি-সাইরাং রেললাইন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী লালডুহমা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিগগিরই এটি উদ্বোধন করবেন।

প্রায় ৮ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে রয়েছে ৪৮টি টানেল, ৫৫টি বড় এবং ৮৭টি ছোট সেতু, ৫টি রোড ওভারব্রিজ এবং ৯টি রোড আন্ডারব্রিজ। এর মধ্যে ১৯৬ নম্বর সেতুটির উচ্চতা ১০৪ মিটার, যা কুতুব মিনারের চেয়েও ৪২ মিটার উঁচু। চার ধাপে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে—এর সর্বশেষ তিনটি ধাপ ২০২৪ সালের জুনে চালু হয়।

এই রেললাইন মিজোরামের রাজধানী আইজলকে জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক।

নগাল্যান্ড, মণিপুর ও সিকিমেও দ্রুত কাজ চলছে :

নগাল্যান্ডে ৮২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডিমাপুর-কোহিমা রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান। এই প্রকল্পে আটটি নতুন স্টেশন এবং ৩১ কিলোমিটার টানেলসহ বড় পরিসরের অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ধানসিঁড়ি-শোখুভি রেলপথ চালু হয়েছে, যা নাগাল্যান্ডের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয়ের ট্রেন চলাচলে সহায়ক হচ্ছে।

মণিপুরে জিরিবাম-ইম্ফল ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন প্রকল্পে কাজ এগিয়ে চলেছে নানা ভৌগোলিক বাধা সত্ত্বেও। এই প্রকল্পে রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলওয়ে পিয়ার সেতু এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ রেল টানেল সাঙ্গাইহেল, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে ৫২টি টানেলের মধ্যে ৫৯ কিলোমিটার এবং শতাধিক সেতুর একটি বড় অংশ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের সিভোক থেকে সিকিমের রাংপো পর্যন্ত ৪৪.৯৬ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্প ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সিকিমের রাজধানী গ্যাংটককে রেলপথে দেশের সঙ্গে যুক্ত করবে।

মেঘালয়ে স্থবিরতা, প্রতিবন্ধকতা স্থানীয় প্রতিরোধে :

মেঘালয়ে রেল প্রকল্পে এখনও বড় অগ্রগতি হয়নি। বহিরাগতদের আগমন বাড়বে—এই আশঙ্কায় স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প স্থগিত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কনরড সাংমা জানিয়েছেন, বিকল্প স্থান চিহ্নিত করে কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

চিকেনস নেক নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে কেন? :

শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের জন্য ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচিত। একইসঙ্গে এটি ভারতের সামরিক রসদের প্রধান সড়কপথ। মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এই ভূখণ্ড সামান্য প্রতিবন্ধকতায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে দিল্লির উদ্বেগ বেড়েছে। এই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বিকল্প সংযোগ গড়ে তুলতেই রেলপথ সম্প্রসারণের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত।