শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ফেনীতে বন্যার পানি নেমে গেলেও রয়ে গেলো ক্ষত

ফেনী প্রতিনিধি : ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের ঢলে বছর না পেরোতেই ফের বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পাঁচটি উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে প্লাবিত হয়েছে একের পর এক জনপদ। বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

তবে সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু কিছু এলাকা। শুক্রবার বিকেলে ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীর বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার বাসিন্দা শাহরিয়া বলেন, “বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে পানির তোড়ে বসতঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা কাজের কারণেই প্রতিবছর আমাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়।”

ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা করিম বলেন, “প্রায় এক সপ্তাহ পর আজ সূর্যের দেখা মিলেছে। বাড়িতে এখনো হাঁটু সমান পানি রয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ থাকলে দ্রুত পানি নামবে বলে আশা করছি। তবে এখনো বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়নি।”

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে গত মঙ্গলবার থেকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পানি কমলেও ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশ নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলার ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, “জেলায় টানা চার দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং আজ সূর্যের দেখা মিলেছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “পরশুরাম ও ফুলগাজীতে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি বাড়ছে। বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে এখনও পানি প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর মেরামতকাজ শুরু হবে।”

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুদ রয়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তায় কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”