রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই লাল চাঁদকে হত্যা করা হয়: ডিএমপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় ছিল কি না – এর জবাবে বলা হয়, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টা আমরা জানি না। এ সম্পর্কে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। যতটুকু জেনেছি, এটা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষয়।’

আজ ‎শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দিন।

উপপুলিশ কমিশনার বলেন, ‘গত বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানাধীন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৩ নম্বর গেটে এবং সংলগ্ন এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। অনেক লোক একত্র হয়ে একজন লোককে বিভিন্নভাবে আঘাত করে হত্যা করে। এই ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা মরদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠাই।’

গত বুধবার বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৩৯) শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।

এর দুই দিন পর গতকাল শুক্রবার হত্যাকাণ্ডটির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সেখানে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায়। ‎

হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার নেপথ্য নিয়ে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙারি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।

‘আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একপর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’ ‎

‎এ ঘটনায় নিহতের বোন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন জানিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘৯ জুলাই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরদিন ভুক্তভোগী সোহাগের বোন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করি। এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব, তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।’

মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে গতকাল নেটিজেনরা তীব্র ক্ষোভ দেখালে গুঞ্জন ওঠে সোহাগকে যারা হত্যা করেছে, তারা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। নৃশংসতার শিকার সোহাগও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে মন্তব্য করেন।

এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই গতকাল সন্ধ্যায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের চারজনকে সংগঠনগুলো থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।

‎বহিষ্কৃতরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

‎আজ সংবাদ সম্মেলনে নিহত সোহাগের এবং তাঁর হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘একটা অপরাধ সংঘটিত হলে কে অপরাধী সেটা বিবেচনা করে পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। অপরাধের সঙ্গে তাদের যে সম্পৃক্ততা, এটাতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। তারা কেন অপরাধটি সংঘটিত করেছে, এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের পরিচয় দেখানো হচ্ছে।

‘কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকেও আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না। এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য তারা আমাদের দেয়নি। আমরা তাদের আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’ ‎

‎ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও ব্যবসায়িক এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে আগাম পুলিশিং ব্যবস্থা ও পুলিশের টহলের ব্যত্যয় ঘটেছিল কি না জানতে চাওয়া হলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।’